মে দিবস ও মাটিয়ালের বেঁচে থাকা
মে দিবস ও মাটিয়ালের বেঁচে থাকা
মাহমুদুল হক ফয়েজ
নোয়াখালী সল্লা গ্রামের আবু তাহেরের জীবন শুরু হয়েছে মাটিকাটার শ্রমিক হিসেবে। তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে তার মাটিকাটার হাতে খড়ি। আবু তাহের জানায়, মাটিকাটার নির্দিষ্ট কোনো দর নেই। সময়ও কোনো নির্ধারণ নেই। দৈনন্দিন হিসেবে চুক্তি হলে সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত কাজ হয়। মাঝে মাঝে কিছু সময় বিশ্রাম নেয়া হয়। একে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘ধাপ’ দেয়া। আবার চুক্তিভিত্তিতেও মাটিকাটা হয়। তখন কত হাজার ঘনফুট মাটিকাটা হলো তার হিসাব করে লেনদেন হয়। প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে একটি বাজারে দর নির্দিষ্ট হয়। কোথাও কোথাও এ বাজার দর ওঠানামাও করে। কাজের পরিমাণ কম থাকলে বাজারদরও কমে।
নোয়াখালী ইউনিয়নের মেম্বার আবদুর রব জানায়, প্রতি বছর কাজের বিনিময়ে খাদ্যের আওতায় গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রচুর কাজ হয়ে থাকে। বিশেষ করে রাস্তা-ঘাট নির্মাণের জন্যই মাটির কাজ বেশি হয়। মাটির কাজের জন্য তখন সর্দারদের সাথে শ্রমিক সরবরাহের চুক্তি হয়। সর্দাররাই মাটিয়াল ঠিক করে চুক্তি অনুযায়ী কাজ উঠিয়ে নেন। তারপর মাপ ঝোঁপ করে হিসেব মত টাকা পরিশোধ করা হয়। সর্দাররা প্রতি শ্রমিক থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা ভাগ পান।
নোয়াখালী অঞ্চলে মাটিয়ালদের সংখ্যা কত তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয় লাধিক শ্রমিক এ কাজে সরাসরি জড়িত। সারা বিশ্বে শ্রমিকদের অধিকার রায় মে দিবস পালিত হয়। শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান শ্রম আইনের বিধান থাকলেও এদের জন্য তা মানা হয় না। শ্রম মজুরিও অনুসরণ করা হয় না। শ্রমিকদের জন্য আলাদা কোনো সংগঠনও নেই। এদের জন্য কোনো শ্রম আদালতও নেই। শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো ঝুট ঝামেলা হলে সালিশের মাধ্যমেই তা নিরসন করা হয়। এজন্য স্থানীয় সালিশদার ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের ওপর এরা নির্ভরশীল থাকেন।
গ্রাম উন্নয়নে এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞে এরা নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যায়। কিন্তু ব্যক্তিগত উন্নয়নের ছোঁয়া এদের জীবনে কখনো লাগে না। স্বাস্থ্য, শিা এদের পরিবারে নেই বললেই চলে। প্রাথমিকভাবে এদের সন্তানেরা স্কুলে গেলেও এক পর্যায়ে শিশু অবস্থাতেই বিভিন্ন কাজে লেগে যায়। এক দীর্ঘ কান্তিকর কঠিন শ্রমে গড়ে ওদের জীবন। শরীরের রক্তঘাম ঝরিয়ে ওরা দেশকে এগিয়ে নেয়। রুপান্তর ঘটায় গ্রামের দৃশ্যপট। অথচ কষ্ট আর নৈরাজ্যে পড়ে থাকে ওদের কঙ্কালসার জীবন।
মাহমুদুল হক ফয়েজ
--Foez 11:23, 18 September 2010 (UTC)