মেঘা বিলের মাঝি
'মেঘা বিলের মাঝি'
মেঘা বিলের মাঝি
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
বন্যায় ভাসছে দেশ। ডুবে গেছে গ্রাম গ্রামান্তর। ডুবে আছে নোয়াখালীর চাটখিল থানার প্রত্যন্ত গ্রাম ইসলামপুর। চাটখিল বাজার থেকে সেই গ্রামে যাবার পথে দুই আড়াই কিলোমিটার উত্তরে গেলেই বদলকোট ইউনিয়ন অফিস। দোতলা পাকা স্কুল। পাশে মসজিদ। আছে গ্রামীন বাজার। বাজারে বেশ কয়টি নানা রকম দোকান রয়েছে। প্রায় সবগুলোই টিনের ছাউনি। বাজারসহ পুরো গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। বদলকোট হাই স্কুলের দোতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে গ্রামের বন্যার্ত মানুষেরা। চাটখিল বাজার থেকেই বদলকোট পর্যন্ত পুরো রাস্তায় হাঁটু পানি। সরকারি দুটো জীপ আমাদের নিয়ে পানি ভেঙ্গে বাজারের একটু দুরেই এসে থামলো। আর যাওয়া যাবেনা। বড় নৌকা নেই। তিনটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা ঠিক করা হলো। যেতে হবে চার-পাঁচ কিলোমিটার আরো উত্তরে ইসলামপুরে। সেখানে আরো একটি দোতলা পাকা মাদ্রাসায় বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছে। সরকারী সাহায্য দেয়া হবে। থানা আওয়ামী লীগের ত্রানও গেছে। বদলকোট বাজার থেকে ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত গ্রামীন রাস্তা ছিলো। সেটি এখন ছয় সাত ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া সেখানে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। তখনো বিকাল। সন্ধ্যার আগেই পৌঁছতে হবে সেখানে। প্রায় দেড় ঘন্টা পথ। ছোট ছোট তিনটি ডিঙ্গি নৌকা ঠিক করা হলো। আমরা আটজন। এক নৌকায় চাটখিলের প্রাক্তন সংসদ সদস্য বৃহত্তর নোয়াখালীর বি এল এফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, চাটখিল থানার টি এনও শফিকুর রহমান, থানার ত্রাণ কার্য্যে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ ম্যাজিষ্ট্রেট তফাজ্জল হোসেন। আর এক নৌকায় থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আতিকুল্লা বিএসসি ও স্বাধীনতা উত্তর বৃহত্তর নোয়াখালীর স্বেচ্ছা সেবক বাহিনী প্রধান মহিউদ্দিন আহম্মেদ। অপর নৌকায় আমার সঙ্গে লোক সংবাদ পত্রিকার তরুণ সাংবাদিক রেজাউল হক শাহীন এবং টিভির জন্য ভিডিও গ্রাহক আমিন। ছোট ডিঙ্গি নৌকা, দু’তিন জনের বেশী উঠা যায় না। তাও নড়াচড়া করলে বিপদ। যে কোনো সময় উল্টে যেতে পারে। নৌকায় উঠেই মাঝিদের বলা হলো দ্রুত যেতে হবে। আর তারাও লম্বা লগি ঠেকিয়ে ছুটলো দ্রুত। স্থির নিথর জলরাশি। পানির মধ্যে মাছ ধরার জন্য কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেই জাল পানি ডিঙ্গিয়ে ছুটলো নৌকা।
অদ্ভুত এক নীরবতায় ছেয়ে গেছে গ্রাম। বিকেলের মেঘ ভাঙ্গা রোদ বড় করুণ রশ্মি ছড়িয়ে লম্বা হয়ে প্রতিবিম্ব ফেললো কালো জলে। নিথর নীরবতা ভেঙে নৌকার ছিপ ফেলার শব্দ উঠে, চলাৎ চলাৎ। একটু পরেই নৌকা এসে পড়লো বিশাল এক বিলে। চতুর্দিকে সবুজ গ্রাম। বড় বড় গাছ-গাছালি ঘেরা বাড়ী। সব পানিতে ডুবে আছে। মানুষজন নেই। সব কিছু নীরব। সেই নীরবতার মধ্যে এক বেদনার শব্দ বিছিয়ে রয়েছে।
আমাদের নৌকা চালিয়ে নিচ্ছিলো বৃদ্ধ বয়সী এক মাঝি। অপূর্ব এক শৈল্পিক ছন্দে লম্বা ছিপ ফেলে নৌকাকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। নীরবতা ভেঙ্গে জিগ্গেস করলাম ‘চাচা’এটা কি বিল’?
ছিপ ফেলে ফেলে মাঝি কথা বলছিলেন-
‘মেঘা জলা। এককালে এটা বিল আছিলো, অন ধান ক্ষেত। কি ধান যে ইয়ানে অইতো। আউশ আর ইরি দু’টাই অয়। কত্তুন এত হানি আইল, বেক ডুবি গেছে। ঐ বাড়ীগুন দেইখছেন যে, বাড়ী ছাড়ি বেক মানুষ দাইছে’।
আমি কথায় ফিরে আসতে চাইলাম। ‘এই যে বিলে ধান হতো বললেন- এখনো কি হয়’?
‘অয়, মেলা কিছিমের ধান অয়। তয়, মেলা জাতের ধান অন আর নাই। কেও কেও অন ও করে। কম; যেমন কালিগচ্চা, বউল্লা, মনাউরা,আমন, রাডা, হরলী, জাওড়া, কাঁকরা, হেরগুল’। মাঝি বলে যাচ্ছিলেন ধানের নাম গুলো। পানিতে কয় গোছা ধান দেখা গেলো। এগুলো তো মনে হয় ধান।
‘হ’। এগুন চৈত মাসে লাগাইছিলো। হানি লগে লগে এগুনও বড় অয়’।
মাঝির আট হাত লম্বা নৌকার ছিপ তখন পানিতে প্রায় ঠাঁই নিচ্ছিলোনা। মানে পানির দশবারো ফুট গভীর লম্বা এই ধান গাছ। জলে ভাসা ধান। যেসব জায়াগায় বন্যার প্রকোপ থাকে কৃষকেরা এগুলোই লাগায়। স্থানীয় জাতের ধান ‘হইল ধান’। সেগুলো আবার নানা প্রাজাতির ‘হইল গচ্ছা, বেলা গচ্ছা , রাজা মোহন , কাডি গচ্ছা। বুঝা গেলো এই মাঝি শুধু নৌকাই চালায় না। কৃষির সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক আছে। মাঝিকে বললাম,
‘আপনার কি জমি আছে’?
‘আছে, এক কানি’।
মাঝি পাল্টা প্রশ্ন করে আমাকে, ‘কানি বুঝেন? একশ বিশ ডিসিমে এক কানি’।
মাঝি নিজেই উত্তর দেয়। ‘এই দেশে এই মাপ’।
‘জ্বী বুঝি। আমিও তো গ্রামের ছেলে’।
মাঝি একটু থামলেন। একটু দমে গে্লেন মনে হলো। শহুরে বাবুদের দেখে গ্রামের মানুষদের ধারনা হয় গ্রামীণ সব কিছুতেই তাদের অজ্ঞতা। আর এ ধারনা যে একেবারে অমূলক নয় তা শহুরে বাবুদের কিছু ভাড়ামো দেখে তারা বুঝে নেয়। গ্রামের প্রতি ছোট শহরের মানুষদের উপেক্ষাই তাদের মনে এ বদ্ধমূল ধারনার জন্ম নিয়েছে। মাঝি এবার বলতে শুরু করলেন তার কথা। নাম মোঃ আমিন উল্লাহ। প্রায় ষাটের মত বয়স হয়েছে। বাবা মোহাম্মদ মিয়া রাজা। নৌকার মাঝি ছিলেন। ছোট বয়সে বাবার সাথে নৌকায় বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। বদলকোটে বাড়ী। এক মেয়ে পাঁচ ছেলে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে নাছিমা বেগম, জামাই মনতাজ মিয়া। ভাল ঘরের ছেলে। জামাই একটা চাকরি করতো। কি একটা ঝামেলায় এখন চাকুরী নেই। বেকার। পাঁচ ছেলে আনোয়ার, মনির, বেলাল, জাকির, ফারুক। বড় ছেলে আনোয়ার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলো। ফেল করেছে। অন্যেরাবেশী পড়েনি। শেষের দুটো ছোট, স্কুলে পড়ে।
বললাম, ‘চাচা, কত বছর ধরে নৌকা চালান’।
‘না, বেশী দিন না। হানি জঅন আইছে হেইত্তুন। এই মাসে নৌকা কিনছি। তার আগে কি করতেন। নারায়নগঞ্জ জুট মিলে কাজ কইত্তাম। একানব্বই সালে রিটায়ার কইচ্চি। এক লাখ সাতাত্তর হাজার চারশ বিয়াল্লিশ টাকা পাইছি’।
টাকা দিয়ে কি করলেন?
‘কিছু দেনা আছিলাম, দিছি। আর গুন দি জমি কিনছি’।
‘এখন বন্যা হওয়াতে তো আপনার ভালই হলো। নৌকা চালিয়ে পয়সা পাচ্ছেন’!
‘হ, পয়সাতো পাই। কিন্তুক মাইনসের তো কষ্ট, সীমাহীন কষ্ট। বাড়ীগর তুন বেক চলি গেছে। কত মাইনসের জমির ধান, হইরের মাছ নষ্ট অইচে’।
ততক্ষনে আমাদের নৌকা একটা বড় বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। বড় বড় নারিকেল গাছ, তালগাছের সারি। তার পাশেই একটি খামার। সারিবদ্ধ পেঁপে গাছ পানিতে ডুবে গেছে। সব মরে লাল হয়ে আছে। মাঝি ঐ দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ঐ যে দেখছেন, ঐডা একটা প্রজেক্ট, সুলতান রাজার প্রজেকট্। মেলা কিছু আছিলো। বেক হানির তলে’।
একটা নীরব কষ্ট মাঝির বুক থেকে উঠে এলো। যেন নিজেরই মহা সম্পদহানি হলো এ বন্যায়। একটা উঁচু তাল গাছে অনেক তাল ধরেছে। সেই তাল গাছের গা ছুঁয়ে নৌকা চলে গেলো।
বষায় গ্রামে-গঞ্জে খাল গুলোতে পানি থৈ থৈ করতো। তখন নৌকায় করে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে সবাই বেড়াতে যেতো। একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকতো। অতিথির বেড়ানো শেষে যাবার সময় তালের মিষ্টি পিঠা হাতে তুলে বলতো, ‘পানি থাকতে আবার বেড়াতে আসবেন’। বর্ষার উৎসবে সে পানির আকাঙ্খা আজ আর কেউ করে না। পানিই যেন এখন কাল হয়ে দাঁড়িছে। কোনো গৃহস্ত বাড়ীর পাশ দিয়ে নৌকার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনলেই বাড়ীর কুল বঁধূটি চঞ্চল হয়ে উঠে চকিত ফিরে তাকাতো। এই বুঝি কোনো আপনজন এলো। বাঁশ পাতার ফাঁকে নোলক পরা বঁধূর সেই ডাগর চোখে, উদাস চাহনী এখন আর দেখা যায় না। একটা চিল বড় বিষন্ন সুরে ডেকে ডেকে আমাদের খুব কাছ দিয়েই উড়ে গেলো।
‘হায় চিল’ সোনালী ডানার চিল, তুমি আর ডেকোনাক’।
আগে নৌকা চলাচলের পথগুলো ছিলো। খাল দিয়ে পানিও সরতো, নৌকাও চলতো। বর্ষায় গাঁও গেরামে নৌকাই ছিলো প্রধান বাহন। এখন সেই খাল দিয়ে নৌকা চলতে পারে না। পুলগুলো খুব নিচু। সে পুলের নিচ দিয়ে নৌকা পার হয় না। শহুরে বাবুদের জন্য গাড়ি ঘোড়ার রাস্তা হয়েছে। অপরদিকে কর্মহীন হয়েছে লাখ লাখ মাঝি। দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষদের।
আমরা বোধ হয় এসে গেলাম। শাহীন ঘুরে ফিরে বসতে চাইলো। নৌকাটি বেশ নড়ে চড়ে উঠলো। পাশ দিয়ে কিছু পানি ঢুকলো। শক্ত করে ধরলাম নৌকার আর এক পাশ। অভিজ্ঞ মাঝি ঠিক করে নিল সব। যেন কিছুই হয়নি। নিশ্চিত নৌকা ডুবি থেকে রক্ষা পেলাম আমরা। মাঝি বলে উঠলেন,
‘সাঁতার জানেন নি’।
‘জানি’,
কিন্তু নৌকা উল্টালে আমাদের দামী ক্যামেরাগুলির কি হবে।
‘লড়িয়েন না, উল্টিত ন’।
আমাদের আশ্বস্ত করে মাঝি। ততক্ষনে আমাদের নৌকা এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে কয়টি সাঁকোর পাশ দিয়ে বাজারে এসে পৌঁছলো। সমস্ত বাজারটাই পানির নিচে ডুবে আছে। বাজারের পাশেই ইসলামপুর হোসেনিয়া দাখিল মাদ্রাসা। দোতলা ভবন। নীচের তলায় এক হাঁটু পানি। ওপর তলায় গ্রামের বিরাশিটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলে প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষ। চর্তুদিকে ময়লা দুর্গন্ধ। সামনের টিউবওয়েল থেকে পানি নিচ্ছিলো অনেকে। সেটিও পানিতে অর্ধেক ডুবা। ঠিক সন্ধ্যার সময়ই আমরা এসে পৌঁছলাম। মাদ্রাসার পাশেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পাকা ভবনের অর্ধেকই পানিতে ডুবে আছে। বাজারের চতুর্দিকে অনেক নৌকার ভিড়। মাদ্রাসার ছাদ থেকে দেখা গেলো সমস্ত এলাকাই যেন এক একটা ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। টি এনও, ম্যাজিষ্ট্রেট এসেই কেন্দ্রে উপস্থিত সংখ্যা, রিলিফ রেজিস্টার পরখ করে নিলেন। প্রতি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, শুকনো খাবার, চিড়া, গুড়, সাবান ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হলো। মাহমুদুর রহমান বেলায়েত তাঁর সাথে আওয়ামীলীগ নেতা আতিকুল্লাহ বি এস সি, টি এনও, ম্যাজিষ্ট্রেট ত্রাণ বিতরণ করলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতই সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাংলার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত দূর্গম অঞ্চলে এসে দুর্গত মানুষদের বাঁচানোর প্রত্যয় নিয়ে ছুটে এলেন বানভাসি অসহায় মানুষের পাশে। সেই যেন একই মুক্তিযুদ্ধ। এখনইতো সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন মৃতপ্রায় মানুষের কাছে আসা। এক ভয়াবহ দুঃসহ দুর্ভোগের মুখোমুখি বাংলার এই প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষেরা সম্মুখীন হয়েছে। তা না দেখলে কল্পনাই করা যায় না। কেউ মারা গেলে কবর দেয়ার মাটিও নেই। দু’জন মারা গিয়েছিলো, তাদের দাফন করা হয়েছিলো বাক্স ভরে পানিতে ডুবিয়ে।
মাগরিবের আযান হলো। নামাজ পড়লেন সবাই। নামাজের পর ত্রাণ বিতরণ করে আমরা ফিরে আসলাম নৌকায়। মাদ্রাসার সিঁড়িতেই নৌকা। সেই একই পথ ধরে ফেরা। সেই মেঘা জলা বিল। আজ পুর্নিমা। রাত্রির নিস্তদ্ধ প্রান্তরে জোৎস্নার আলো ছড়িয়ে পড়লো। কাব্যের সময় নায় এখন। এমন সুন্দর প্রকৃতির মাঝে কত অসহায় মানুষ। চাঁদকে বার বার ঢেকে দিচ্ছিলো ভেসে আসা কয়টি ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। করুণ বিবর্ণ শরীরের রোগা গ্রস্থ' মানুষগুলোর করুণ মুখ বার বার চোখে ভাসে। অসংখ্য শিশু। প্রাণোচ্ছল দিনগুলো দুর্যোগের ভিতর কেটে যায়।
মাঝির দিকে তাকালাম। চাঁদের আলো পড়েছে তার মুখে। এক মুখ দাঁড়ি। বললাম-
‘চাচা আপনার বাড়ীতে পানি উঠে নাই?
‘হানি উইটতন কা। বেক ডুবি গেছে। চকির উপর চকি রাখি রইছি।’
‘ক্যাম্পে আসেন নাই ক্যান’।
‘গর ফালাই কিল্লাই আইমু। যেতাগো একছার চলি গেছে হেতারা আইছে। রিলিফ কিল্লাই লইমু। আঁর তুনও কত কষ্টে আছে মানুষ। আঁইতো নৌকা বাই’।
বললাম এ পর্যন্ত কত পেয়েছেন।
‘তিন হাজার অইবো’।
‘সেতো আপনার ভালোই হলো। দেড় মাসেই নৌকার দাম উঠে গেছে’।
মাঝি সায় দিলেন, ‘হ’।
‘বন্যায় তো আপনার আয়ের পথ বেড়ে গেলো’।
‘মাইনসেরে কষ্টে ফালাই আয় করি কি লাভ’। দৃঢ় চিত্তে বলল মাঝি। মাঝির দিকে আবার তাকালাম। চাঁদের আলো যেনো ঝলকে উঠলো তার মুখে। হ্যাঁ, মানুষদের কষ্টে ফেলে কত জনে কত পয়সা বানাচ্ছে। কোটি টাকার সম্পদ গড়ছে। তাদের কাছে কি অখ্যাত এই মেঘা বিলের মাঝির অমোঘ কথাটির কোনো মূল্য আছে? একটু দম নিয়ে আবার মাঝি বলতে লাগলো-
‘মানুষ বাওনের ফইসা, হালাল ফইসা, বুইজ্জেননি। পালকি আর নৌকা। এই কামে কোনো ফাঁকি জুকি নাই। সোয়াব অয়’।
এতক্ষণে নৌকা এসে গেছে বদলকোটে। ডুবে যাওয়া একটা পাকা কবর ফেলে নৌকা ভিড়লো বাজারের রাস্তার পাশে স্কুলের সিঁড়িতে। অনেক রাত হয়ে গেলো। ততক্ষনে চাঁদ আরো উপরে উঠে গেছে। বাংলার এই নিভৃত গ্রামের মাঝির সঙ্গে জীবনে আর হয়তো কোনোদিন দেখা হবে না। জীবনের অসম্ভব দামী এই কয়টা সময় স্মৃতির ভান্ডে জমা হয়ে থাকলো।
মুক্তকন্ঠ
বুধবার,২৮ অক্টোবর, ১৯৯৮
--Foez 08:14, 3 June 2013 (UTC)