পেঁপে
'পেঁপে'
পেঁপে
মাহমুদুল হক ফয়েজ
উদ্ভিদের নাম : পেঁপে গাছ, papaya
স্থানীয় নাম : পেঁপে, ককিয়া , হাইয়া
ভেষজ নাম : Carica papaya Linn
ব্যবহার্য অংশ : আঠা, ফল ও পাতা
রোপনের সময় : নার্সারীতে চারা জন্মানোর পর ৭-১০ সেমি উঁচু হলে তা লাগানোর উপযুক্ত হয়। এটি প্রায় সারা বছরই জন্মে।
উত্তোলনের সময় : এটিকে বারোমাসি উদ্ভিদ ও বলা যায়। সারা বছরই পাওয়া যায়।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : এটি বসতবাড়ী এবং বাগানে চাষ করা হয়।
চাষের ধরণ : পেঁপে সব ধরনের মাটিতে জন্মে থাকে । বেলে মাটিতে বেশি ভালো জন্মে। এটি উঁচু স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ভালো জন্মে। এটি চাষের জন্য প্রথমে বীজ তলায়বীজ রোপন (ছবি)করতে হয়। পরবর্তীতে চারা গজালে বীজ তলা থেকে তুলে অন্যত্র লাগানো হয়। এটি রোপনের ক্ষেত্রে তেমন দুরত্বের প্রয়োজন হয়না ।
উদ্ভিদের ধরণ: পেঁপে বহু বর্ষজীবি নয়। এটি সবুজ কান্ড বিশিষ্ট মধ্যমাকারের সোজা গাছ।
পরিচিতি: এ গাছ মধ্যমাকারের সোজা গাছ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়। শাখা-প্রশাখা হয় না। তবে গাছ পুরানো হলে দু একটি শাখা বের হয়। মূল কান্ডের চারপাশে পাতা বের হয় এবং পাকলে ঝরে যায়। এটি আকারে বেশ বড় হয়। এর কিনারা ৭ ভাগেবিভক্ত। নলের মত বোঁটাটি ফাঁপা, এটি ৩ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার গোড়া ও কান্ডের যোগস্থলে ফুল বের হয়। সব ফুল থেকে আবার ফল হয়না। স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকে ফল হয়। এর আকার বেশ বড়। তবে এর গা ঢেউ খেলানো হয়। কাঁচা অবস্থায় এর রং সবুজ পাকলে কিছুটা অংশ হলুদ হয়। এতে দুধের মত আঠা আছে। এই ফলের মধ্যে ফাঁপা এবং অনেকগুলি বিচি থাকে। ফল কচি থাকা অবস্থায় বিচির রং সাদা এবং পাকলে ধুসর বা কালোহয়ে থাকে। প্রায় সারা বছরই ফুল ও ফল দেখা যায়।
ঔষধি গুনাগুন : কাঁচা পেঁপের রস থেকে পেপসিন নামক জারক রস পাওয়া যায়। যা অজীর্ণরোগে বিশেষ ফলদায়াক। পেঁপের আঠা মুত্রনালীর ক্ষতে ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। ডিপথেরিয়া, স্পলীহা ও যকৃত বৃদ্ধিতে পেঁপের রসের ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। পেঁপের আঠা বাহ্যিক প্রয়োগও হয়। শুষ্ক দাদ ও একজিমাতে এর আঠা ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া সব্জী হিসাবে রান্না করে খেলে অর্শরোগে হিতকর এবং এটি স্তন বৃদ্ধি কারক হিশাবে প্রসি্দ্ধি আছে। পেঁপের বীজ ক্রিমিনাশক রজঃনিসারক ও তৃষ্ণা নিবারক হিসাবে ব্যবহ্রত হয়। কাঁচা পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমিনাশক রজঃনিসারক ও প্লীহা-যকৃতের হিতকর। পাকা পেপে কোষ্ঠ পরিষ্কারক, বায়ুনাশক ও মূত্রকারক।
১। রক্ত আমাশয়: প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।
২। ক্রিমি: যে কোনো প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে উঞ্চ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি বা কলিচুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
৩। আমাশয়: আমাশয় ও পেটে যন্ত্রনা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে।
৪। যকৃত বৃদ্ধিতে: এই অবস্থা হলে ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
৫। ক্ষুধা ও হজম শক্তিতে: প্রত্যেকদিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।
৬। পেট ফাঁপায়: কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, আর সামান্য লবন এবং একটু গোলমরিচের গুড়ো একসংগে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয।
৭। প্রবল জ্বরে: দেড় চামচ পেঁপে পাতার রসএক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রনা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৮। মাসিক ঋতু বন্ধে: যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচিগুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু’বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে, তবে অন্য কোন কারনে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৯। দাদে: সে যে কোনো প্রকারের হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে, একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে, এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।
১০। একজিমায়: যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।
১১। উকুন হলে: ১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ওই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে (ছবি)কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর আর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।
সূত্রঃ
চিরঞ্জীব বনৌষধী
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য
মাহমুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail:- mhfoez@gmail.com
--Foez 10:01, 31 May 2013 (UTC)