পূর্ণিমা
পূর্ণিমা
পূর্ণিমা
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
পূর্ণিমা
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
তুমি কী ভালবাস ?
পার্কের একটা পাতা ছুঁয়ে আনমনে বলল ইতি।
মাছরাঙা পাখি। কাঁধ নীচু করে একটু বাঁকিয়ে একটা ছোট্ট লাফ দিল সুমন । যেন একটা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গেল।
মাছরাঙা পাখি! ঘাড় বাঁকিয়ে চোখ টানটান করে তাকাল ইতি। ওরা দেখতে খুব সুন্দর ফিটফাট,
চিক চিক করে শরীর, কিন্তু কাজটা খুব খারাপ করে।
মানে? কি খারাপ করে ?
এই যে, ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে চুপটি করে বসে থাকে। সুযোগ সন্ধানী । তারপর সুযোগ বুঝে ছোঁ মেরে ছোট্ট মাছটা পানিতে ডুব দিয়ে নিয়ে যাবে।
আহারে মাছটা । ওকি আর জানতো । কেন বাবা, ধরবি যখন, যুদ্ধ করে ধর ।
সুমন মৃদু হাসে, কথা বাড়ায় না । একটু চুপ থেকে বলল-
তোমার ?
ইতি আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বলে-
‘চাঁদ। পূর্ণিমার চাঁদ। ভরা পূর্ণিমা আমাকে দারুন মাতাল করে দেয়।
জোৎস্নারা যখন আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, এক পুলকিত আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠি। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আহা দূরে সুদূরে নিঃসঙ্গ আমারই মত আমাকে হয়ত কেউ দেখছে। আমি ছায়ায় তার মুখ দেখি’।
একটু চুপ থেকে ইতি আবার বলে-
পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালে তুমি আমাকে দেখতে পাবে? যত দূরেই আমি থাকি?
তোমাকে দেখতে চাঁদের দিকে তাকাতে হবে কেন? আমি তো সরাসরি দেখতে পাচ্ছি।
ঘুরে ইতির দিকে মুখ ফিরালো সুমন।
না- যখন থাকবোনা, তখন। খিল খিল করে হাসে ইতি।
বেদনার গভীর থেকে কে আর কষ্টের বেদনা বুকে তুলে নিতে চায়। সেদিন ভরা পূর্ণিমায় সুমন কি কখনো ভেবেছিলো, এক দীর্ঘ অনন্ত কষ্টের নিঃসঙ্গতায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে হবে!
জোৎস্নার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশায় বেজে যায় বেহাগের সুর।
গোরস্থানের বৃদ্ধ খাদেম দেখে আসছে,
এক মাঝবয়সী নিঃসঙ্গ একজন পুরুষ একটা পুরাতন কবরে এসে
প্রতি পূর্ণিমায় কিছু লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়ে যায়।
মাহ্মুদুল হক ফযেজ
Foez 13:42, 20 January 2010 (UTC)