নোয়াখালী জামে মসজিদ, ধর্মপ্রাণ মানুষের তীর্থস্থান
নোয়াখালী জামে মসজিদ
নোয়াখালী জামে মসজিদ, ধর্মপ্রাণ মানুষের তীর্থস্থান
মাহমুদুল হক ফয়েজ</Font.>
নোয়াখালী জামে মসজিদ,
ধর্মপ্রাণ মানুষের তীর্থস্থান
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
নোয়াখালীর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এক অপূর্ব স্বর্গীয় ভাবাবেগ নিয়ে অবস্থান করছে মাইজদী জামে মসজিদ। মাইজদী বড় মসজিদ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। প্রতিদিন শতশত ধর্মপ্রাণ মুসল্লী নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। পুরাতন নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার পরে মাইজদীতে নতুন শহর গড়ার সময়য়েই ১৯৫০ সালে মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয়। দিনে দিনে নানান প্রতিষ্ঠান ও নানান জনের অনুদান আর নোয়াখালী বাসীর প্রতিদিনের মানতের টাকায় গড়ে উঠছে অনন্য সুন্দর এই মসজিদ। এর পশ্চিমে রয়েছে একটি বড় পুকুর, দক্ষিনে জিলা স্কুল উত্তরে ষ্টেশান রোড এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা সড়ক বিভাগের ভবন, পূর্বে গণপূর্ত বিভাগের ভূমি। এই মসজিদের সীমানা ৩ একর ৮০ ডিসিমেল। এই মসজিদটি তৈরির সময় ছোট এক তলা ভবনে অপরুপ মুসলিম ও দেশী লোকজ শিল্প সৌন্দর্যে লতাপাতা আর নানা কোরআনের আয়াত ও উপদেশ বাণী উৎকীর্ণ করে নির্মান করা হয়। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থে ৮০ ফুট আয়তনে মূল ভবনে তিনটি সুর্দৃশ্য গম্বুজ ও নয়টি সুউচ্চ মিনার ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত হয়। পুরাতন শহরের জামে মসজিদটি ছিলো সকল ধর্মের সকল মানুষের শ্রদ্ধাবনত উপাসনার পীঠস্থান। মূল নোয়াখালী শহর মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় সেই মসজিদটিও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায়।
অনেক কিংবদন্তি ছিলো সে মসজিদকে ঘিরে। জনমনে বিশ্বাস ছিলো কেউ কোনো কিছু মানত করলে মহান আল্লাহতালা সে মানত কবুল করতেন। অনেক প্রবীনজনদের কাছে জানা যায়, বহু পুরাতন সে মসজিদের ভিতর কথা বল্লে এক প্রকার ঐশ্বরিক গুমগুম আওয়াজ করতো। গভীর রাতে সমস্ত পৃথিবী যখন নি:শব্দ হয়ে আসতো তখন কেউ কোরআন তেলওয়াত করলে কোরআনের সে বাণী অলৌকিক ভাবে মসজিদের দেয়াল থেকে গুরু গম্ভীর আওয়াজে আবার ফিরে আসতো। সে মসজিদটি যখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো তখন প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ছুটে গিয়েছিলো ভাঙন দেখতে। অনেকের বিশ্বাস ছিলো অলৌকিক কারনে উত্তাল সাগর থেকে হয়তো মসজিদটি রক্ষা পাবে। কিন্তু হাজার হাজার নারী পুরুষের বুকফাটা ক্রন্দন ছাপিয়ে অমিত ক্ষুধার্ত সাগরের উন্মত্ত ঠেউয়ের তোড়ে টুকরো টুকরো হয়ে মসজিদটি সাগরে বিলীন হতে লাগলো। তখন মানুষ প্রত্যক্ষ করলো যে, অসংখ্য মাটির ফাঁপা পিপা দিয়ে গাঁথা হয়েছিলো মসজিদের ভীত। সম্ভবত: এ শুণ্য মাটির পিপের ভীতের জন্যই শব্দ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে মসজিদে কেউ কথা বল্লে প্রতিধ্বনিত হয়ে গুমগুম আওয়াজ করতো। সে মসজিদটি বিশাল ঠেউয়ের সাথে সাথে একএক বার একএক টুকরো হয়ে নদীতে বিলীন হয় গেলো। তবু বিশ্বাসে বদ্ধমূল মানুষজন ভাবলো পুরো মসজিদটি হয়তো অন্য কোথাও আবার পুরোপুরি ভেসে উঠবে। সাগর পাড়ে নদীর চরায় দূরে মসজিদটি আবার ভেসে উঠেছে এই গুজব কোথাও উঠলে মূহুর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতো সেদিকে। কিন্তু সকল জল্পনা কল্পনার অবসানঘটিয়ে মসজাদিটি সত্যি সত্যিই নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে গেলো। পাঁজর ভাঙা মানুষের সেই বেদনা আর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নতুন শহরে মানুষের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ফের তিল তিল করে গড়ে উঠে এ মসজিদ। মসজিদের প্রবেশ পথে অনন্য সুন্দর গোলাপ বাগান যে কোনো ধর্মপ্রাণ রুচিশীল মানুষের হৃদয় পবিত্র স্নিগ্ধতায় ভরে দেয়। মসজিদের ভিতর উত্তর পূর্ব কোনে কালো পর্দায় ঘেরা দিয়ে মহিলাদের নামাজ পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্দানশিন মহিলা সেখানে নামাজ আদায় করেন। এখানে আরো আসে হিন্দু খৃষ্টান সহ সকল ধর্মের সকল নারী পুরুষ, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভক্তি জানান তাঁরা। মানত করে দিয়ে যান খুশিমত উপঢৌকন। সকল ধর্মের সকল মানুষের এটি যেন এক মহামিলনের তীর্থস্থান। একটি মসজিদ কমিটির পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মসজিদের সাথে আছে একটি এতিম খানা ও মাদ্রাসা। পাশেই আছে মসজিদের কবরস্থান। এখানে শায়িত আছেন প্রাক্তন সেক্রেটারী আনোয়ার উল্লাহ পেষ্কার, লেংটা হুজুর, নোয়াখালী পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যন মরহুম শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার (কচি) ও জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিরা। এ মসজিদের অভ্যন্তরে আছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। পুরানো মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় ঝাড়বাতি, লোহার সুদৃশ্য গেইট ও অসংখ্য শ্বেত পথরের টুকরো রক্ষা করা গেছে। সেগুলো এখন বর্তমান মসজিদের শোভা বর্ধন করছে। মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধার জন্য এখানে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে আধুনিক শৌচাগার, গোসলখানা ও ওজু খানা।
মসজিদের সাথে মানব কল্যান মজলিস নামে একটি জনহিতকর সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। যা আর্তমানবতার সেবায় মসজিদ ভিত্তিক একটি সংগঠনের রুপ নিয়েছে। সুপার মার্কেট, রেষ্ট হাউস্, পুকুর লিজের অর্থ, সমাজের দানশীল মহত ব্যক্তি আর অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুদানে দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি পাচ্ছে এই মসজিদ। ১৮৪১ সালের পুরাতন নোয়াখালী শহরে মরহুম ইমাম উদ্দিন সওদাগর নিজের জমিতে যে জামে মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন দিনে দিনে নানান জনের নানান স্পর্শে তার সুখ্যাতি চতুর্দিকে বিকশিত হয়ে উঠেছিলো। কালক্রমে ভাঙাগড়া নোয়াখালীর পলিমাটিতে মসজিদটি দিন দিন আবার ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যে শুশোভিত হয়ে উঠছে।
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক
মুঠোফোন: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@ gmail.comed">
Foez 07:04, 20 January 2010 (UTC)