ঢেউয়া

From WikiEducator
Jump to: navigation, search

'ঢেউয়া'


Dhua1.jpg



ঢেউয়া

মাহমুদুল হক ফয়েজ


উদ্ভিদের নাম : ঢেউয়া, ঢেউফল, ডেলোমাদার, Dheua

স্থানীয় নাম :ঢেউয়া, ঢেউফল, এর সংস্কৃতি নাম লকুচ, বাংলা নাম ডেলোমাদার ও হিন্দী নাম ডেহুয়া।

ভেষজ নাম : Artocarpus lakoocha Roxb,

ফ্যামিলি: Moraceae.


ব্যবহার্য অংশ : কাঁচা ফল, পাকা ফল, ছালের গুঁড়ো, গাছের আঠা, বীজ, ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ-ছাল, ক্ষীর (আঠা), ফল ও বীজ।


রোপনের সময় : বর্ষাকাল

উত্তোলনের সময় : সাধারনতঃ মার্চ মাসে ফুল ও আগষ্ট মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে।

আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদি, অনাবাদি, বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।


উদ্ভিদের ধরণ: শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বৃহৎ বৃক্ষ।


Dhua1.jpgDhua3.jpgDhua2.jpg

পরিচিতি: শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বৃহৎ বৃক্ষ। প্রায় ২০/২৫ফুট উঁচু হয়, ছাল ধূসর বর্ণের এবং খসখসে। সমগ্র গাছে দুধের মত আঠা আছে। পাতা প্রায় ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া খসখসে, দেখতে অনেকটা কাকডুমুরের (Ficus hispida)পাতার মত, তবে আকারে তা থেকে একটু বড়, এর বৃন্ত বা বোঁটা আধ ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি লম্বা। স্ত্রী ও পুরুষ ভেদে ফুল দুই প্রকারের এবং মঞ্জরীদন্ডের উপর সাজানো থাকে। কিন্তু স্ত্রীজাতীয় ফুল আকারে বড়, বোঁটা ছোট ও মসৃণ। ফুলের পাঁপড়ি নেই, ছোট গুঁটির আকারে হয়। উক্ত স্ত্রীজাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়, গুচ্ছফলের বহিরাবরনটা অসমান অর্বুদাকার (এবড়ো-খেবড়ো), কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে বহিরাবরণ পীতবর্ণ কিন্তু ভিতরের শাঁস লাল বর্ণের হয়। কাঁঠালের ছোট কোয়ার (কোষের) মত কোয়া এবং তার মধ্যে বীজও আছে। স্বাদে মধুরাম্বল, সাধারনতঃ মার্চ মাসে ফুল ও আগষ্ট মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে।


ঔষধি গুনাগুন :কাঁচা ফল স্বাদে অম্লরসাত্মক, ত্রিদোষজনক, ক্ষুধা অপহারক। পাকা ফল মধুরাম্ল রসবিশিষ্ট, গুরুপাক, কফবর্ধক, কামোদ্দীপক ও ক্ষুধাবর্ধক। বীজ বিরেচক। ঔষধার্থে প্রয়োগ পাকা ফল পিত্তবিকারে ও যকৃতের পীড়ায় হিতকারী। ইহা অতিসেবনে ক্লীবতা আনে। ছালের গুঁড়ো ও ক্কাথ গায়ের চামড়ার রুক্ষতায় বাহ্য প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া ব্রণের দুষিত পুঁজাদি বাহির করার জন্যও উক্ত ছালের পুল্টিস্ হিতকর। ইউনানী চিকিৎসকেরা এর বীজ শিশুদের বিরেচনের জন্য প্রয়োগ করে থাকেন।

১। দাস্ত অপরিস্কারেঃ- পরিস্কার হচ্ছে না, তখন কাঁচা ফল ৮/১০ গ্রাম থেতো করে এক কাপ গরম জলে মিশিয়ে সেটা ছেকে ঐ জলটা খেলে দাস্ত পরিস্কার হবে। এটা হয় রাত্রির দিকে নইলে সকালে খেতে হবে।

২। মেদ বাহুল্যে ;- খাওয়া-দাওয়ায় খুবই হিসেব করে চলেও শরীরে মেদ বেড়ে যাচ্ছে, এদিকে ক্ষিধেয় কমতি নেই, সে আবার যখন-তখন, এক্ষেত্রে কাঁচা ডেলোমাদারের/ডেহুয়া ফলের রস এক/দেড় চা-চামচ এক কাপ ঠান্ডা জলে মিশিয়ে কয়েকটা দিন খেতে হবে, এর দ্বারা ওই অস্বাভাবিক মেদ কমে যাবে। তবে মেদ কমাতে গেলে, আলু, চিনি বা যেকোন মিষ্টদ্রব্য খাওয়া বন্ধ করতে হবে, অবশ্য মধু একটু-আধটু খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা ফল থেতো করে শুকিয়ে সেটাকে গুড়ো করে তিন গ্রাম মাত্রায় প্রত্যহ ঠান্ডা জলসহ খেতে হবে।

৩। অরুচি রোগে- টক, ঝাল, মিষ্টি যেটাই হোক না, কোন স্বাদের জিনিস মুখে দিতে ইচ্ছে হয় না, অথচ পেটে প্রচুর ক্ষিধে। এ রোগটার উৎপত্তি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পেটে আম এবং সেটা পিত্তসংযুক্ত আম কেবলমাত্র এক্ষেত্রে পাকা ডেলোমাদারের/ডেহুয়া রস ২/৩ চামচ এবং তার সঙ্গে একটু লবণ ও গোল মরিচের গুড়ো মিশিয়ে দুপুর বেলার খাওয়ার পূর্বে খেতে হবে, অবশ্য এটা ২-৪দিন খেতে হবে। এর দ্বারা ওই অরুচিটা চলে যাবে।

৪। শুক্রকীটের অপ্রতুলতায়;- এটাতে দেখা যায় হয়তো দাম্পত্য সুখের অপ্রতুলতা নেই, অথচ সন্তানাদি হচ্ছে না, এদিকে দেখা যায় স্ত্রীর সন্তান না হওয়ার মত কোন দোষ খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে বুঝতে হবে, শুক্রে যত সংখ্যক কীট জন্মালে বা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকলে সন্তান হয় সেটা নিশ্চয়ই নেই। এইটাই যে কারন সেটা বর্তমানযুগে পরীক্ষা করে নেওয়ার তো আর অসুবিধে নেই, সুতরাং সেটা স্থির নিশ্চয় হলে এই পাকা ডেলোমাদার/ ডেহুয়া ফলের রস এক/দেড় চা-চামচ একটু চিনি মিশিয়ে অন্ততঃ মাসখানেক খেতে হবে। এটির ব্যবহারে শুক্রে কীটের আধিক্যও ঘটবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা হলেই সন্তান হওয়ার পথ সুগম হবে।

৬। পাতলা দাস্তেঃ- মলটা তরল হচ্ছে অথচ আমযুক্ত নয়। সেই রকম ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার্য্য। এইটার কারন ঘটেছে কোন গুরুপাক দ্রব্য খাওয়াতে অথবা ভাল হজম হয়নি, তার ওপর আবার খাওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে ডেলোমাদারের বীজের গুড়ো (মিহি) আধগ্রাম মাত্রায় ৩/৪ঘন্টা বাদ দুবার খেতে হবে।

বাহ্য প্রয়োগ :

৭। দূষিত ঘায়েঃ- যেকোন কারনে দূষিত ঘা (ক্ষত) হোক না কেন, ডেলোমাদারের/ ডেহুয়া গাছের ছাল চূর্ণ (মিহি) ওই ঘায়ের উপর ছড়িয়ে দিলে কয়েকদিনের মধ্যে ওই ঘা শুকিয়ে যাবে।


সুত্রঃ-

চিরঞ্জীব বনৌষধী

আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য


মাহমুদুল হক ফয়েজ

মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯

e-mail:- mhfoez@gmail.com


--Foez 12:40, 5 June 2013 (UTC)