ঝিঙ্গা
'ঝিঙ্গা'
ঝিঙ্গা
মাহমুদুল হক ফয়েজ
উদ্ভিদের নাম : ঝিঙ্গা Jhinga
স্থানীয় নাম : এর সংস্কৃত নাম ধারা কোষাতকী, বাংলা নাম ঝিঙ্গা বা ঝিঙ্গে, হিন্দীতে ঝিমানি ও তামিলে ভেরিবিরা নামে পরিচিত
ভেষজ নাম : Luffa, acutangula Roxb, x
ফ্যামিলিঃ- Cucurbitaceae
ব্যবহার্য অংশ : পাতা, ফল, বীজ ও মূল
রোপনের সময় : সাধারনতঃ বাংলায় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ পোতা হয়, এভিন্ন ঋতুর তারতম্য ভেদে অন্য মাসেও এই সবজ্জীর চাষ হয়।
উত্তোলনের সময় : চাষের ৬০-৭৫ দিনের মধ্যে
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদি সব্জী। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়
চাষের ধরণ : আবাদি সব্জী।
পরিচিতি: বর্ষজীবী লতাগাছ কিন্তু কোণ বিশিষ্ট, মসৃণ গাঁট থেকে নুতন কান্ড বের হয় ও পরিনত সময়ে ফুল ও ফল হয়, লতাটি আকর্ষযুক্ত, (সাধারনত) বেড়ায় গায়ে, মাচায় ও অন্য গাছকে আশ্রয় করে প্রসারিত হয়ে থাকে। সাধারনত স্ত্রী পুরুষ ভেদে লাউ কুমড়োর মত দুই রকমের ফুল হয়। স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফুলের বর্ণ ঈষৎ হলদে। সন্ধ্যার পূর্বে ফুল ফোটে। সবুজ বর্ণের ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমশঃ মোটা এবং শিরতোলা, এজন্য এর নাম ধারা কোষাতকী। ফলের অভ্যন্তরস্থ প্রকোষ্ঠগুলি যেন জাল বুনে তৈরী। সেটা দেখা যায় ফল পাকলে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেকগুলি বীজ থাকে। এগুলি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি ও চেপ্টা। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের সর্ব প্রদেশেই কমবেশী এর চাষ হয়,
ঔষধি গুনাগুন :
ফলের রস স্বাদে মধুর, শীতগুন সম্পন্ন, পিত্ত প্রশমক, ক্রিমিনাশক, ক্ষুধা বর্ধক ও বেদনাশক।
ঔষাধার্থ প্রয়োগ ; পাতা ক্ষুধাবর্ধক, পিত্ত প্রশমক, মূত্রকারক, প্লীহারোগে, রক্তস্রাবে ও কুষ্ঠ রোগে হিতকর। পাতার রস শিশুদের চোখে দিলে চোখের যন্ত্রনার উপশম হয়।
ফল ক্রিমির উপদ্রবে হিতকর। পিত্তপ্রশমক, হাঁপানি ও কাসিতে ব্যবহৃত হয়।
বীজ মৃদুবিরেচক ও বমনকারক। অতিসার রোগেও এর ব্যবহার দৃষ্ট হয়।
মূলের ছাল কারো কারো মতে গর্ভস্রাব কারক, বিরেচক, মূত্রকারক ও বিষদোষ নাশক।
১। শোথের মুত্রাল্পতায়ঃ- অবশ্য অনেক কারনেই শোথ হয়ে থাকে। তবে মুচকে গেলে বা ফোড়া হলে সেই স্থানের শোথের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় না।
হৃদরোগ, যকৃদগত রোগ ও অন্যান্য কারনে শোথ হয় এবং তাতে মূত্রেরও কৃচ্ছতা হয়। সেই সময় ঝিঙ্গে (পাকা নয়) ও তার পাতার রস অথবা যেকোন একটির রস করে একটু গরম করে রাখতে হবে, তা থেকে ২ চা চামচ করে দুঘন্টা অন্তর ৩/৪বার আধ কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে, তবে পাতার রস হলে ২ বারের বেশী নয়। ঝিঙ্গের রস হলে ৪ বার দেওয়া যায়। এর দ্বারা যেদুটি প্রধান উপসর্গ শোথ ও মূত্রাল্পতা এ দুটির উপশম হবে।
২। মাথার যন্ত্রনায় (শেলষ্মাজনিত) ঝিঙ্গে ফলের রস (পাকা নয়) ২/৩ ফোটা করে নাকে টেনে নিলে এবং সেই সঙ্গে ২ চা চামচ করে রস খেলে (একটু গরম করে ৭/৮ চা চামচ জল মিশিয়ে) শ্লেষ্মা বেরিয়ে গিয়ে যন্ত্রনাটা কমে যাবে।
৩। বমনেচ্ছায়ঃ- চাপা অম্বল, প্রায় গা বমি করা, সেই ক্ষেত্রে পাকা ঝিঙ্গে বীজ বেটে (৩/৪টি) এক কাপ জলে গুলে খেতে হয়। যদি পেটে বায়ু থাকে সেটাও কমে যাবে। বমনেচ্ছাটাও থাকবে না, তবে ওটা বেটে জলে গুলে ন্যাকড়ায় ছেকে নিতে হবে। তবে ঝিঙ্গে যদি তেতো (তিক্ত) হয়, তাহলে তার বীজ বেটে খেলে বমন হয়। সুতরাং যাদের শরীর দুর্বল, কিংবা বৃদ্ধ, বালক, গর্ভিনী, হৃদরোগে আক্রান্ত এমন রোগীকে এটা খাওয়ানো সমীচীন হবে না।
৪। কুষ্ঠরোগেঃ- আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে এটাকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন দাদকে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র কুষ্ঠ। যদি দেখা যায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না অথবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঝিঙ্গে পাতার রস এক দেড় চামচ প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে একটু জল মিশিয়ে খেতে হবে। আর কুষ্ঠের রুপ যেখানে প্রকাশ পেয়েছে সেখানে ওই পাতার রস লাগাতে হবে। এই ভাবে অন্ততঃ ২ মাস প্রত্যহ খেতে হবে, তাতে এ থেকে কিছুটা পরিত্রান পাওয়া যাবে।
৫। অর্শের রক্ত পড়ায়ঃ- একে রক্তার্শ ও বলা হয়। রক্ত পড়ে, তার সঙ্গে যন্ত্রনা। এক্ষেত্রে কচিও নয় আবার বুড়োও নয় এই রকম ঝিঙ্গে কুচি কুচি করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে তাকে গুড়ো করে নিতে হবে এবং কাপড়ে বা চালু নিতে ছেকে ওই গুড়ো ১ গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে দুবার করে খেতে হবে। এটা দৈব ঔষদ বলে প্রচলিত।
৬। চোখে পিঁচুটি ও জুড়ে যেতে থাকলে- (এটা শ্লেষ্মাবিকার থেকেই হয় আবার ঠান্ডা লেগেও হয়।) ওই সময় ঝিঙের কচি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে সেটা চোখে দিতে হবে।
সূত্রঃ-
চিরঞ্জীব বনৌষধী
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য
৪র্থ-খন্ড, পৃষ্ঠা-২৪০
মাহমুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail:- mhfoez@gmail.com
--Foez 13:43, 5 June 2013 (UTC)