চলমান নোয়াখালীর অগ্রযাত্রা
চলমান নোয়াখালীর অগ্রযাত্রা
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
গত কিছুদিন ধরে অসম্ভব রকম ব্যস্ত ছিলাম। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে। ছুটাছুটি হচ্ছিলো ঢাকা নোয়াখালী। যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। ঠিক এরি মধ্যে রুদ্র মাসুদ ফোন করে বসলেন। ‘চলমান নোয়াখালীর’ বর্ষপুর্তি। পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বের হবে। লেখা দিতে হবে। হঠাৎ করে এ ফরমায়েশ আমার জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু যত বড় মুশকিলই হোক রুদ্রকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। সেও নাছোড়বান্দা। লেখার জন্য প্রতিনিয়ত ফোনে তাগাদা দিয়েই চলেছে। অবশেষে তারই জয় হলো। ঢাকা থেকে আজ নেমেই এ মধ্যরাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তার জন্য কম্পিউটারের সামনে বসতে হলো। কী-বোর্ডে আঙুল চালাতে চালাতে তার উদ্বিগ্ন মুখচ্ছবি বার বার আমার মনের মনিটরে ভেসে উঠছিলো।
নোয়াখালীতে যে কয়জন প্রতিশ্রুতিশীল সংবাদকর্মী নানান প্রতিকুলতার মধ্যেও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে রুদ্র তাদের মধ্যে প্রথম সারির। তার নিষ্ঠা ও কাজ তাকে আরো বেশী গতিশীল ও পরিশীলিত করেছে। সাত বছর আগে যখন প্রথম ‘চলমান নোয়াখালী’ আত্ম প্রকাশ করে তখন অনেকের মত আমারো মনে আশঙ্কা ছিলো পত্রিকাটি বোধ হয় বেশী দূর এগুতে পারবেনা। কিন্তু সব কিছুকে মুছে দিয়ে পত্রিকাটি আজ সাত বছর পূর্তি করছে। শুধু তাই নয় এ কয়বছর পত্রিকাটির প্রকাশনায় কোনো রকম বত্যয় ঘটেনি। নোয়াখালী থেকে কোন পত্রিকা প্রকাশ করা যে কী কঠিন, যাঁরা এখানে পত্রিকা প্রকাশ করতে চেষ্টা করেন, তাঁরা এটা হাড়ে হাড়ে টের পান। আরো আনন্দের বিষয় এই যে, এ পত্রিকাটি শুধু ছাপাই হয়না, এর অনলাইন সংস্করণ ও আছে। এবং তা নিয়মিত আপগ্রেড হয়। নোয়াখালীর মত মফস্বল জেলা থেকে একই সঙ্গে প্রিন্ট এবং অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ করা চাট্টিখানি কথা নয়। এদিক দিয়ে পত্রিকাটি অনেক ধাপ উপরে উঠে গেছে। এর জন্য আমরা সবাই গর্বও করতে পারি। কারণ নোয়াখালীর সাংবাদিকতা এখন প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যেই শুধু আবদ্ধ নেই এ অঞ্চলের সংবাদিকতা অনলাইনেও চলে গেছে এবং তা ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বব্যাপী। তবে অনলাইন সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন পত্রিকা ‘নোয়াখালী ওয়েব’ ইতিমধ্যেই বিশ্বের বাংলাভাষী পাঠকদের মাঝে একটি স্থান করে নিয়েছে।
বিগত প্রায় দেড়দশকে নোয়াখালীর সাংবাদিকদের দক্ষতার মধ্যে ধীরে ধীরে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশী সংবাদ পরিবেশণ করছেন। বিশ্লেষণ ধর্মী প্রতিবেদন এখন বেশী বেশী সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। মানবাধিকার পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকরা অরো বেশী মনযোগী হয়েছেন। নোয়াখালীর সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে অনেকে লিখছেন।
নোয়াখালী অঞ্চলে সংবাদ পরিবেশণের ক্ষেত্রেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন এ অঞ্চলে অনেক নতুন নতুন সংবাদকর্মীও তৈরী হয়েছে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নোয়াখালীর সাংবাদিকরা নানানমূখী সমস্যায় পড়ে থাকেন এর মধ্যে মুল সমস্যা হলো অর্থনৈতিক। তাই অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্বেও এ পেশায় আসতে চান না। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ জেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা গুলো কিছুদিন পরেই হারিয়ে যায়। অথচ বর্তমানে সাংবাদিকতায় নানান দিক প্রশারিত হলেও মেধা সম্পন্ন কেউ এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হননা। এ সব কিছু ছাপিয়ে রুদ্র মাসুদের মত সাংবাদিকরা এ জগতে প্রবেশ করছেন এটা আমাদের জন্য আশা জাগানিয়া বিষয়।
বৃহত্তর নোয়াখালী একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জেলা। ভৌগোলিক দিক দিয়েও এর গুরুত্ব অপরিসীম। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। সে ঝুঁকির মধ্যেও সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এ নোয়াখালী জেলা। শত শত বছর ধরে নোয়াখালীর দক্ষিনে সাগর থেকে যে বিপুল ভূমি জেগে উঠছে তা আমাদের জন্য প্রাকৃতিক একটি আশির্বাদ। নোয়াখালীর সার্বিক উন্নয়নে জেগে উঠা এ বিপুল ভূমিকে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় তার কোনো সুপরিকল্পনা আমরা এখনো করতে পারিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপুল জনগোষ্ঠির পেশা পরিবর্তন হবে নানান রকম ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে পড়বে তার জন্য আগাম প্রস্তুতিও আমরা এখনো নিতে পারিনি। তবে স্থানীয় ভাবে আমাদের সরকারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন থেকেই তা তুলে ধরতে হবে। চলমান নোয়াখালীর মত স্থানীয় পত্রিকা যার অনলাইন সংস্করণ আছে এ পত্রিকাটি পারে জলবায়ু পবির্তনের প্রভাব স্থানীয় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পত্রিকার মাধ্যমে তা বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরা। ‘চলমান নোয়াখালী’ টিকে থাকলে তার মাধ্যমে এ অঞ্চলের আশা আকাঙ্খা গুলোও প্রতিফলিত হবে।
আশা করি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং আমাদের সরকার তার গুরুত্ব অনুধাবন করবেন। আমাদের সকলের প্রত্যাশা ‘চলমান নোয়াখালী’ দীর্ঘদিন টিকে থাকুক।
মাহমুদুল হক ফয়েজ
সাংবাদিক
মাইজদি কোর্ট,
২৯ অক্টোবর,২০১০