করবী
'করবী'
করবী
মাহমুদুল হক ফয়েজ
উদ্ভিদের নাম : করবী, Karabi
স্থানীয় নাম : করবী,
ভেষজ নাম : : Apocynaceae
ফ্যামিলী : Nerium indicum
ব্যবহার্য অংশ : গাছ-পাতা ফল রোপনের সময় : বছরের সব সময় রোপন করা যায়
উত্তোলনের সময় : বৎসরের প্রায় সব সময় ফুল ও ফল হয়।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : সব ধরনের হয়ে থাকে
চাষের ধরণ : পাকা ফল বা ডাল থেকে নতুন গাছ জন্মে।
উদ্ভিদের ধরণ: চিরসবুজ ঝাড়দার গাছ। ১০/১২ হাত পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। পাতা সরু ও লম্বাটে, হালকা সবুজ রঙের। ফুল হলদে রঙের, আকৃতি কলকের মত, তাই এর আর এক নাম কলকে ফুল। ফুলের পাপড়ি ৫টি, পাকানো। হলদে রঙের ছাড়াও সাদা ও ফিকে লাল রঙের ফুলও দেখা যায়। ডগার অগ্রভাগে কয়েকটি ফুল হয় এবং তৎপরে ফল ধরে। ফল শাঁসযুক্ত, কাঁচায় সবুজ, পাকলে ধূসর রঙের হয়ে থাকে। ফুলে মধু থাকে। শিশুরা ফুলের বোঁটা ভেঙ্গে মধু চুষে খেয়ে ফুলটা ফেলে দেয়। ফলের ভেতর শক্ত বীজ থাকে, বীজের মধ্যে থাকে শাঁস।
পরিচিতি: এটির আদি বাসস্থান দক্ষিন আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বর্তমানে ভারতের সমভূমি অঞ্চলে যত্র তত্র দেখা যায়। বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য প্রায় লাগানো হয়ে থাকে। একবার কোন স্থানে জন্মালে তার কাছাকাছি জায়গায় প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এটির একটি প্রজাতিই ভারতে পাওয়া যায়।
ঔষধি গুনাগুন :ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশঃ ত্বক। ত্বক চূর্ণ ৫০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম এবং ত্বকের অরিষ্ট ১০-১৫ ফোঁটা ব্যবহার্য।
গাছের সমস্ত অংশই বিষাক্ত, শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য গৃহপালিত পশুর ক্ষেত্রেও এটি বিষাক্ত ।
গাছের ছালঃ অধিক মাত্রায় বিষাক্ত। ছালের অরিষ্ট কটু, তিক্ত, বিরেচক এবং বমনকারক। বিভিন্ন প্রকার সবিরাম জ্বরে ব্যবহৃত হয়। ছাল চুর্ণ সিনকোনা অপেক্ষা ৫গুন জ্বরঘ্ন শক্তিসম্পন্ন। ছালের মাত্রা অধিক হলে পাতলা দাস্ত ও বমন হয়। খালি পেটে প্রয়োগ উচিত নয়। যেহেতু তীব্র বিষাক্ত দ্রব্য, সেইহেতু সাবধানে মাত্রা বিবেচনা করা উচিত।
হৃদরোগে এর ক্রিয়া ডিজিটেলিসের তুল্য এবং শ্বেত ও রক্ত করবীর ক্রিয়াও এই রকম। অল্প মাত্রায় ব্যবহার করলে হৃদয়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়, অধিক মাত্রায় এটি ঘাতক। পরিনামে শরীর শীতল হয়ে নাড়ীর গতি মন্দ হয় এবং হৃদয়ের কাজ স্তব্ধ হয়ে যায়। গাছের শুকনো টাটকা ছাল ১ আউন্স পরিমান নিয়ে তাতে ৫ আউন্স পরিস্রুত স্পিরিট মিশিয়ে ৮ দিন মুখ বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। ৮ দিন পরে ছেকে যে অরিষ্টটি পাওয়া যাবে, তার মাত্রা ১০-১৫ ফোঁটা এবং তা সারাদিনে ৩ বার পর্যন্ত খেতে দেওয়া যায়। এটি বয়স্কদের মাত্রা।
মূলের ছালঃ- গাছের ছাল ও মূলের ছাল প্রায় সমগুন সম্পন্ন। কটু ও জ্বরঘœ। নবজ্বরে ও বিষমজ্বরে হিতকর। উপরিউক্ত পদ্ধতিতে অরিষ্ট তৈরী করে ব্যবহার করা যায়। অধিক মাত্রায় খুবই বিষাক্ত। মূলের ছাল দিয়ে তৈরী তেল চর্মরোগ নাশক। মূল বা মূলের ছাল বেটে অর্বুদে প্রলেপ।
পাতাঃ- ছালের মত পাতাও বিরেচক ও বমনকারক। মানুষ ও পশুর ক্ষেত্রে বিষাক্ত। পাতার ক্কাথ দিয়ে তৈরী তেল কন্ডু, চুলকানিতে লাগালে উপকার হয়।
চারাগাছ তিক্ত, তীক্ষ্ণ, অতিশয় কটু, উষ্ণ, সংকোচক, মুত্রকৃচ্ছ্রতায় উপকারী, চর্মরোগ নিবারক, শ্বেতী, ক্ষত, অর্শ, চক্ষুপীড়া, চুলকনা, জ্বর, ফুসফুসাবরন প্রদাহ এবং বাত-প্রশমক।
ফল/বীজ অত্যধিক বিষাক্ত। গর্ভস্রাবকারক, শোথ ও বাত রোগে বিরেচনার্থ ব্যবহার্য। গবাদি পশুমারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজের ক্কাথ বমনকারক, শ্বসন-ক্রিয়া ব্যাহতকারী, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্তদ্ধকারক, অর্শনাশক। বীজের তৈল বমনকারক ও বিরেচক। এটি অলিভ অয়েলের মতও ব্যবহার করা যেতে পারে। ফল বমনকারক, ফল খেলে শীতজনিত ঘর্ম, উন্মত্ততা, প্রলাপ ও অন্যান্য স্নায়ুবিক লক্ষণ প্রকাশ পায়, বমি হয়, নাড়ীর স্পন্দন ধীর হতে হতে দৃষ্টি শক্তি স্থির হয়ে শেষে সংজ্ঞাহীনতা আসে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বমনকারক ঔষধ ব্যবহার্য। বীজ খেলে মস্তিস্কে, পাকযন্ত্রে ও শিরদাঁড়ায় পক্ষাঘাত হয়ে মৃত্যু হয়। বীজের শাঁস-তীব্র বিষাক্ত। হৃদয়ের বলকারক। অত্যাধিক তিক্ত, চিবুলে জিভে অসাড়তা আসে, জিভ গরম হয়ে যায়।
গাছের দুগ্ধ রস (ক্ষীর) গাছের সমস্ত অংশ থেকে নিঃসৃত ক্ষীরই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিষাক্ত, দাহজনক, তিক্ত, বিরেচক, অতিশয় কটু, বমনকারক, সবিরাম জ্বরনাশক। ক্ষতেও পা ফাটায় ব্যবহার্য। ফুল: হৃদয়ের বলকারক পদার্থ আছে। এর দ্বারা প্রস্তুত তেল চুলকানি নষ্ট করে। ফুলের মধু উপাদেয় খাদ্য।
সতর্কতা: এটির কোন অংশের ব্যবহার আনাড়িভাবে করা উচিত নয়, তা ভয়ঙ্কর বিপদের কারন হতে পারে। এগুলি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে, তাঁদের পরামর্শ ব্যতিরেকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
সূত্রঃ-
চিরঞ্জীব বনৌষধী
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য
৯ম-খন্ড, পৃষ্ঠা-১৯৭
মাহমুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail:- mhfoez@gmail.com
--Foez 14:30, 6 June 2013 (UTC)