কদম
'কদম'
কদম
মাহমুদুল হক ফয়েজ
উদ্ভিদের নাম : কদম, কদম্ব, Kadam
স্থানীয় নাম : কদম,
ভেষজ নাম : Anthocephauls indicus A.Rich / Adina cordifolia
ফ্যামিলি:- Rubiaceae
ব্যবহার্য অংশ :গাছের ছাল, কান্ড, পাতা, ফল, ফূল ফুলের রেণু ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
রোপনের সময় : বর্ষাকাল
উত্তোলনের সময় : সারা বছর সংগ্রহ করা যায়।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদী, অনাবাদী বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।
চাষের ধরণ : বীজ ও কলম থেকে গাছ উৎপন্ন হয়
উদ্ভিদের ধরণ: বড় বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।
বৃক্ষ পরিচিতিঃ-বড় বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ বাংলাদেশের সর্বত্র একে পাওয়া যায়।
গ্রামীন ব্যবহারঃ-
(১) কোষবৃদ্ধিতে (Hydrocele)-কদম গাছের ছালকে (ত্বক্) চন্দনের মত বেটে কোষে লাগিয়ে তারপর কদমপাতা দিয়ে বাঁধতে হবে, তাহলে ব্যথা ও ফোলা দুই-ই কমে যাবে।
(২) শিশুদের কৃমিতে:- অনেকে এই পাতার রস খাইয়ে থাকেন, কিন্তু বয়সানুপাতে মাত্রা বেশী হলে বমি হতে পারে, এক্ষেত্রে সব থেকে নিরাপদ-পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়ানো। ৪/৫ বৎসরের শিশুদের ৩ গ্রেণ মাত্রায় সকালে একবার খাওয়ানো যায়; যদি না কমে তাহলে সকালে ও বিকালে ২বার দিতে হবে। সপ্তাহ মধ্যে উপদ্রব কমে যাবে। এটায় প্রত্যহ মলের সঙ্গে কিছু কিছু বেরিয়েও যাবে। এমনকি কেঁচো ক্রিমি বা গোল ক্রিমি (Round worm) ও সুতা ক্রিমি (Thread worm) বেরিয়ে যাবে
পাশ্চত্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্রিমিনাশক ঔষধের দু’টি ধারা আছে। এক শ্রেণীর ঔষধ পোকাগুলির জীবনক্রিয়াকে স্তব্ধ করে ( Metabolic poison) তাদের মৃত্যু ঘটায়; এদর বলা হয় ভারমিসাইডস্ (Vermicide).. এটির ব্যবহার কিন্তু সীমিত। আর এক শ্রেণীর ঔষধ-যেগুলি ক্রিমি কীটের মৃত্যু না ঘটিয়ে কীটগুলিকে অসাড় করে, ওদের ক্রিয়া অনেকটা নারকোটিক ধরণের; এগুলিকে বলা হয় ভারমিফিজেস্ (Vermifuges). আমাদের কদম পাতা এক্ষেত্রে শেষোক্ত ধরণের কাজ করে।
(৩) অর্বুদে (Tumour): কচি ছাল চন্দনের মত বেটে সহ্যমত গরম করে লাগালে কমে যেত থাকে, ব্যথা থাকলে সেটাও সের যায়।
(৪) মুখে গন্ধেঃ- যাঁদের মুখে মাঝে মাঝে দূর্গন্ধ হয়, তাঁরা কদম ফুল কয়েকটা নিয়ে কুচিয়ে কেটে জলে সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে দিনে-রাত্রে কুল্লি করলে অবশ্যই তা দূর হয়।
(৫) শিশুদের মুখের ঘায়ে ও স্টোমাটাইটিসে (Stomatitis) কদম পাতা সিদ্ধ জলের কবল ধারণ (মুখের রাখা) বা কুল কুচায় শীঘ্র সেরে যায়। এই গাছের ছাল জ্বরে ব্যবহার হয় এবং টনিকেরও কার্য করে, এ ভিন্ন বহু রোগের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার করা হয়েছে।
(৬) নেশার আশায়ঃ- গাছের ছালে গর্ত করে শুকনো ছোলা ও লবঙ্গ পুরে রাখা হতো, পরদিন ছোলাগুলি কদমের রস টেনে ফুলে গেলে সেগুলি সংগ্রহ করে খেলে অল্প নেশাও হয় এবং বৈবশ্য(বিবশতা) সৃষ্টি করে। এখনও উড়িষ্যার গ্রামাঞ্চলে গাঁজার কলিগুলোকে কদম গাছের গায়ে পুঁতে রেখে পরের দিন যথানিয়মে সেবিত হয়ে থাকে। তাই তাকে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে সেকালের কোকেন।
নতুন তথ্যের সন্ধানেঃ- কদমগাছের ছালে (ত্বকে) সিনকোনার সহধর্মী দ্রব্য পাওয়া যায়, এটি পাশ্চত্য ভেষজ বিজ্ঞানীদের পরীক্ষিত। এই সিনকোনা ও কদমগাছ এ দু’টির ফ্যামিলি একই (Rubiaceae) এবং আলোচ্য বনৌষধিটি বিবশতাকারক, কদমছালের ট্যাবলেট জিয়ারডিয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে ১০/১২ দিনের মধ্যে নেগেটিভ হয়ে যায়। তবে দেখা যায়- কচি ছালে উপকার বেশী হয়। ঋতুভেদে দ্রব্যের গুণ কম-বেশী হয়।
চরকঃ-
(১) ব্রণাচ্ছাদনার্থ কদম্ব পত্রঃ- কদম্বের পত্র দ্বারা ক্ষত আচ্ছাদিত করলে উপকার পাওয়া যায়।
(২) মুত্রের বৈবর্ণ্যে ও কৃচ্ছতায় কদম্বঃ- কদম্বের ক্বাথ ও গব্যদুগ্ধসহ যথাবিধি ঘৃত পান করলে মূত্রের বিবর্ণতা ও কৃচ্ছতা নিবৃত্তি পায়।
(৩)চক্ষুপ্রদাহঃ- কদম্বের ছাল জ্বরনাশক ও বলকারক। ইহার ছালের চূর্ণ, অহিফেন ও ফিটকিরি সমপরিমাণে মিশাইয়া অক্ষিকোটরের চতুর্দিকে দিলে চক্ষুপ্রদাহ আরাম করে।
(৪) মুখের ঘায়েঃ- কদম্ব পত্রের ক্বাথ ক্ষত ও মুখের ঘায়ে দিলে সেরে যায়।
(৫) বমনেঃ- কদম্ব ত্বকের রস জীরাচূর্ণ ও চিনির সহিত সেবনে শিশুর বমন নিবারিত হয়।
(৬) জ্বরের প্রবলাবস্থায়- যখন অতিশয় পিপাসা হয়, তখন কদম্বফলের রস সেবন করলে পিপাসা নিবারিত হয়।
(৭ বেদনায়ঃ- ,কোন স্থানে বেদনা, শুক্রশোধন ও বমনের জন্য কদম্ব নির্যাস হিতকর (চরক)
(৮) কদম্ব পাতার কল্কঃ- বালকদিগের মুখের ঘায়ে এবং যে কোন মুখের ঘায়ে ‘কুলি’ হিসাবে ব্যবহারে উপকার হয়।
সুত্রঃ-
চিরঞ্জীব বনৌষধী
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য
মাহমুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail:- mhfoez@gmail.com
--Foez 11:51, 4 June 2013 (UTC)