হুমকীর মুখে প্রাণী ও উদ্ভিত জগৎ

From WikiEducator
Jump to: navigation, search



Butterfly.gif


হুমকীর মুখে প্রাণী ও উদ্ভিত জগৎ

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশন সোসাইটি (আইইউসিএন) বাংলাদেশের প্রাণিজগতের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙকা প্রকাশ করছ,যে জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের বিরূপ কর্মকাণ্ড ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের বিরূপ কর্মকাণ্ড যে হারে বাড়ছে তাতে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতরে উপর এক মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বভিন্নি জরিপে দেখা গেছে, পরিবেশ দূষণের কারণে শুধু বাংলাদেশেই বছরে ১৫ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এর ফলে বছরে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও পরিবেশ দূষণের ফলে মাতৃগর্ভেই প্রায় চার হাজার শিশু মৃত্যু বরণ করে থাকে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্খ্য ও জীবিকা আজ হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি নানান প্রজাতির পাখিদের এক স্নিগ্ধ অভায়রন্য। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে স্খানীয় পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৩৮৮ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে এসে এ দেশে বসবাস করছে এমন পাখির প্রজাতি ২৪৪টি। এর মধ্যে ১২ প্রজাতির পাখি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরো ৩০ প্রজাতির পাখি দ্রুত বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এক সময় ১১০ প্রজাতির পশুর বিচরণ ছিল। এর মধ্যে আইইউসিএন ৪০ প্রজাতিকে তাদের ‘রেড ডাটা বুক’-এ অন্তর্ভুক্ত করা করেছে। দেশে ওষুধি, বনজ ও ফলদসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি গাছপালা ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ইতোমধ্যে এর ১০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন সঙ্কট মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বনভূমি ও জলাশয়সহ প্রাণিকুলের বাসস্খান। সার্বিকভাবে পৃথিবীর গোটা জীববৈচিত্র্যই আজ হুমকির মুখে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এক সময় দেশে ১৬৬ প্রজাতির মিঠা পানির এবং ৪৪২ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যেত। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে এসব মিঠা পানির ও সামুদ্রিক মাছের অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে। আইইউসিএন এখানকার ৫৪ প্রজাতির মাছকে তাদের ‘রেড ডাটা বুক’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে। পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের শিল্পকারখানা থেকে মোট ৬২ ধরনের মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে। আর এই দূষণের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে ১৫ হাজার মানুষ। মাতৃগর্ভেই মৃত্যুবরণ করছে প্রায় চার হাজার শিশু। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছে দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। এসব রোগের চিকিৎসায় বছরে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের ফলে রাজধানীর বাতাস ক্রমেই ভারী হয়ে যাচ্ছে। বাতাসে বিষাক্ত সিসার মাত্রা কেবল বেড়েই চলেছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্খ্য ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশবিষয়ক এক রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ পাঁচ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও একই সময়ে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়জনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপি’র চার শতাংশের সমান। শুধু রাজধানীর পানিসম্পদের দুর্বল ব্যবস্খাপনায় বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের অবিবেচক কর্মকান্ডের ফলে একদিন আমরা ধ্বংসরে দ্বার প্রান্তে এসে সব কিছু অনুধাবন করতে পারলেও তখন হয়ত আমাদের আর কিছুই করার থাকবেনা।

--Foez 11:42, 31 December 2009 (UTC)