রক্ত ঋণে সোনার স্বদেশ

From WikiEducator
Jump to: navigation, search

'রক্ত ঋণে সোনার স্বদেশ'




# রক্ত ঋণে সোনার স্বদেশ #

লোক হর্ষক ক’টি নৃশংশতার কাহিনী


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

একাত্তরের ২২শে এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রবেশ করলো নোয়াখালীর সদর মাইজদীর্কোটে। সে পর্যন্ত মুক্তি যোদ্ধাদের দখলেই ছিল শহর এলাকা। আধুনিক অস্র সস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীর কাছে সামান্য অস্ত্র দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে দাঁড়ানো অসম্ভব ভেবে মুক্তিযোদ্ধারা সরে গিয়েছিলো মুক্তাঞ্চলে। হানাদার বাহিনী অবস্থান নিল পি.টি.আই ও তখনকার নির্মাণাধীন সদর হাসপাতালে, যোগাযোগ হলো স্থানীয় গুটি কয়েক স্বাধীনতা বিরোধী পদলেহী কিছু ঘৃনিত মুখচেনাদের সাথে। গঠন করলো আলবদর, আলশামছ, আর রাজাকার বাহিনী। বিস্তার করলো হিংস্র শ্বাপদ দৃষ্টি। তাদের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শহরের অনেকেই চলে গিয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়ে। তার পরেও হানাদার শ্বাপদ কুকুরেরা হত্যা করেছিল অনেক নিরিহ বাঙ্গালীকে।



শহীদ নৃপেন কুমার পাল 

শহীদ নৃপেন কুমার পাল ছিলেন, নোয়াখালী পৌরসভার কমিশনার। এলাকায় ছিল তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয়তা। তখনকার গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। তাঁর পিতা চিন্তা হরন পাল ছিলেন “নোয়াখালী বুক ষ্টোর” নামে একটি বই দোকানের মালিক। হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশের আগেই শহীদ নৃপেন তার ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে, স্ত্রী আরতি রানী পালসহ শহরের পূর্বে ভূঁইয়ার হাটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন। এদিকে মাইকলাতু বলে কুখ্যাত একরাজাকার তার গতিবিধির উপর শ্যোন দৃষ্টি রাখতে লাগলো। এপ্রিলের শেষ দিকে ১৫ই বৈশাখ নৃপেন পাল তার ছোট ভাই শিবেন্দ্র কুমার পালসহ সন্ধ্যায় মাইজদীতে আসে। সন্ধ্যা ০৭.৩০ টার দিকেব রাজাকার মাইক লাতুসহ একদল রাজাকার নৃপেন পালের বাড়ী ঘিরে পেলে। এ সময় তার ছোট ভাই শিবেন্দ্র পাল ঘরের পাটাতনের নীচে লুকিয়ে যায়। রাজাকাররা এসে নৃপেন পালকে ধরে ফেলে এবং সেখানেই অমানুষিক নির্যাতন করতে আরম্ভ করে। এ অব¯’ায় তার ছোট ভাই লুকানো জায়গা থেকে এসে ভাইকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আকুতি করতে থাকে। শিবেন্দ্র দেখতে ছিল খুবই সুন্দর ও সুদেহী। সে ভেবেছিল তাকে দেখে হয়তো রাজাকারদের কর“না হবে। কিš‘ু রক্ত যাদের নেশা হিংস্রতা যাদের স্বভাব তাদের আবার কর“না কি, দু’ ভাইকে বেঁেধ জীপে তুলে তারা পি.টি.আইতে রাজাকারদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে অকথ্য নির্যাতন করে পাশেই একটি গর্ত করে দু’ভাইকে একসাথে গুলি করে হত্যা করে। পরে গ্রামবাসীরা রক্ত কাদায় একাকার হয়ে যাওয়া লাশ দু’টিকে একসাথে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। সে সময় একটি কর“ন দৃশ্য গ্রামবাসীরা প্রত্যক্ষ করে। নৃপেন পাল ছিলেন অত্যন্ত স্নেহ প্রবন একজন ব্যাক্তি তার ছিল ‘লালু’ নামে একটি পোষা কুকুর। তিনি কুকুরটিকে খুবই আদর যতœ করতেন। তাদেরকে যখন রাজাকাররা জীপে তুলে নিয়ে যায়, তখন ‘লালু’ ও তাদের পিছনে পিছনে ছুটে যায়। তারপর যেখানে তাদের মাটি চাপা দেয়া হয়, সেখানে ‘লালু’ আছড়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠে। তারপর তাকে সে এলাকা থেকে কেহই নড়াতে পারে নি। আমৃত্যু সেখানেই ঘুরে ফিরে কর“ন আর্তনাদ করতো। তার সেই আর্তনাতে গ্রামবাসীদেরও চোখে জল এসে যেতো। কিছুদিন পর সবাই দেখলো ‘লালু’ সেইখানে মাথা রেখে মরে পড়ে আছে। মানুষ উপলব্ধি করলো প্রভুভক্ত এক বোবা প্রাণী কি ভাবে জীবন দিয়ে উৎসর্গ করলো প্রভুর প্রতি অকৃত্তিম ভক্তির শেষ নৈবদ্য।

 হিংস্র রাজাকারদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হলেন 
  ৮৫ বৎসরের বৃদ্ধ রায় সাহেব


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

রায় সাহেব নগেন্দ্র কুমার শুর। মানুষটি ছিলেন অসম্ভব ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ও স্বাধীনচেতা। স্বনাম ধন্য উকিল হিসাবে তাঁর ছিল সুখ্যাতি। নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লোকে ডাকতো রায় সাহেব বলে। এটি তাঁর উপাধী ছিলো। নোয়াখালী বার কাউন্সিল, পাবলিক লাইব্রেরী, জেলা কাউন্সিল, রেড ক্রস, বয়েস স্কাউট প্রভৃতি সংগঠনের তিনি ছিলেন মধ্যমনি। তার স্পষ্ট উ”চারনে যুক্তি নির্ভর বক্তৃতা শ্রোতারা মনোমুগ্ধের মত শুনতো। অশেষ জ্ঞানে ভান্ডার ছিলেন। একটি প্রতিষ্ঠান তাকে উপাধী দিয়েছিলো ‘জ্ঞানোশ্রী’। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলনে তার ছিলো অগ্রনী ভূমিকা। এদেশের মাটি আর মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁর বহু আত্মীয় স্বজন পশ্চিম বঙ্গে চলে গেলেও এ দেশের মাটির সঙ্গেই তিনি মিশে ছিলেন। তাঁর ৬ ছেলে, ২ কন্যা। ১ ছেলে প্রশান্ত কুমার শুর একাত্তর সনে ছিলেন কলকাতার মেয়র। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পৌর মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন। নোয়াখালী শহরের উপকন্ঠে ‘গুপ্তাংকে’ ছিলো টিনের বাংলো সাদৃশ্য বাড়ী। প্রধান সড়কের পাশেই ছিল সে বাড়ী। নাম শূর ভবন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুর“ হলে সবাই তাকে ভারতে চলে যেতে বলেন। কিন্তু মাটির মায়ায় তিনি এ দেশে থেকে যান। বেগমগঞ্জের জমিদার হাটের ২৩ নং রসুলপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে ছিল তার পৈত্রিক নিবাস। শহর ছেড়ে সেখানে চলে আসেন তিনি। তার ১ পুত্র প্রনব কুমার শূর তখন ফেনীর ছাগল নাইয়াতে সরকারী চাকুরী করিতেন। সেখান থেকে তিনিও স্ত্রী বন্ধনা শুর সহ বৃদ্ধপিতা রায় সাহেবের কাছে গ্রামে চলে আসেন। একটি অভিজাত বনেদী পরিবার হিসাবে তাদের ছিল সকল ধর্মের সকল মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত নিবীড় সম্পর্ক। তাই এখানেই তাঁরা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গা মনে করে ছিলেন। কি্নতু হিংস্র স্বাপদের রক্ত চক্ষুর ছায়া পড়লো শান্ত স্নিগ্ধ রায় সাহেব আর তার বাড়ীর উপর। একাত্তরের ২২শে সেপ্টেম্বর। সেদিন ছিল বুধবার। সকাল আনুমানিক ০৮.৩০ টার দিকে চৌমুহনী শান্তি কমিটির নির্দেশে প্রায় চল্লিশ জন রাজাকার রায় সাহেবের বাড়ীতে হানা দেয়। কুখ্যাত রাজাকারদের মধ্যে ছিল রাজাকার কমান্ডার আবুল কাশেম, আব্দুল লতিফ, আফজল মিয়া, তফাজ্জল হক, আব্দুল হক, জয়নাল আবেদীন, শামছুল হক, আব্দুল মালেক, ইলিয়াস মিয়া, চৌধুরী মিয়া, আব্দুর রব(১), আবুল কাশেম, কোরবান আলী সর্দার, মনু ডুবালী, আব্দুর রব (২) সহ অন্য রাজাকাররা। অতর্কিতে এসে তারা সমস্ত বাড়ী ঘিরে ফেলে। বাড়ীর সকল পুর“ষ ও মহিলাদের লাইন করে দাঁড় করায়। এরপর তারা রায় সাহেব ও তার ছেলে প্রনব কুমার শূরকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলে। বাঁধা অবস্থায় তারা রায় সাহেবকে অমানুষিক ভাবে মারতে থাকে। এসময় তারা বাড়ীর সমস্ত মালামাল সহ নৌকায় ভর্তি করে রায় সাহেবকে তুলে নেয়। ভাগ্য ক্রমে ছেলে প্রণব শূর তাদের হাত থেকে ছাড়া পায়। রাজাকাররা যখন লুটতরাজে ব্যস্ত তখন বন্ধনা শূর তার এক বৃদ্ধা পিসিকে নিয়ে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। রায় সাহেবকে বেঁধে তারা চৌমুহনী রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। সেখানে ছিল কুখ্যাত খোকা মিয়া, খন্দকার আতাউর রহমান, আর মনির আহম্মদ। সেদিনই তারা রায় সাহেবকে মাইজদীতে নির্মাণাধীন সদর হাসপাতালের পাকিস্তানী মিলিটারী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। সেই সময়ের ক্যাম্পের ইনচার্জ পাকিস্তানী মেজর আশিতিপর এই বৃদ্ধ রায় সাহেবকে হত্যা না করে ছেড়ে দিতে বলেন। কিš‘ু শান্তি কমিটির খন্দকার আতাউর রহমান, জামাতে ইসলামীর প্রফেসর মহিউদ্দিন, পি.ডি.বির এডভোকেট সিদ্দিক উল্ল্যাহ কাউন্সিল মুসলিম লীগের ছাইদুল হক তাঁকে হত্যা করার জন্য সেই পাকিস্তানী মেজর ইমতিয়াজকে প্ররোচিত করে এবং হত্যার অনুমোদন দেয়। তারপর অমানুষিক নির্যাতন করে ২৪শে সেপ্টেম্বর তাকে গুলি করে হত্যা করে ক্যাম্পের পাশেই বড় গর্ত করে পুতে রাখে। সেদিন রায় সাহেব সহ ৭জনকে তারা নির্মম ভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে সুলতান মাঝিও ছিল। মুক্তি যুদ্ধে সহযোগীতার জন্য তাঁকেও রাজাকাররা ক্যাম্পে ধরে এনেছিল। স্বাধীনতার পর রায় সাহেবের ছেলে প্রণব কুমার শূর বেগমগঞ্জ থানায় সমস্ত বিষয় জানিয়ে ইউ.এস/১৪৮/১৪৯/৩০২/৩৬৪/৩৮০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৮, তারিখ ঃ- ১৯/০১/৭২ ইং প্রণব শূর চাকুরী থেকে অবসর নিয়োছেন সম্প্রতি। রায় সাহেবের মাইজদীর স্মৃতিকে তিনি ধরে আছেন এখন।

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময়ের পর সেই সব রক্তাক্ত ক্ষতের স্মৃতি গুলোতে জমে গেছে পুরু ধুলি। সেই ধুলি গুলোকে ঝেড়ে নিতেও আজ বেজে উঠে কষ্টের সুকরুন সুর।

জীপের পিছনে বেঁধে রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে 
   হত্যা করেছিল চিত্তরঞ্জন সাহা-কে

নোয়াখালীতে পাকিস্তানী বাহিনী যে কটি হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছিলো তার মধ্যে চিত্ত রঞ্জন সাহার হত্যাটি ছিল অত্যন্ত নৃশংশ লোমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক। চিত্ত রঞ্জন সাহা ছিলেন নোয়াখালী পৌর মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী। ঊনসত্তর গণআন্দোলনে নানা ভাবে সহযোগীতা করেছিলেন। তার বড় ছেলে সঞ্জু সাহা তখন কল্যান হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। সেই উত্তাল দিনগুলিতে তিনি নিয়মিত মিছিলে অংশ গ্রহণ করতেন। শহরের হরিনারায়নপুর এলাকায় ছিল তাদের বাড়ী। মুক্তিযুদ্ধ শুর“ হলে চিত্ত রঞ্জন সাহা পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাসন হাটের দেবীপুরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মাসের ১০ তারিখে শহরের অবস্থা দেখার জন্য গোপনে মাইজদী আসেন। খবর পেয়ে ঐ দিন সকাল ১০.০০ টার দিকে সামু হোনারী, আলু জালাল, গোলাপ মিয়া নামের ক’জন শান্তি কমিটির লোকজন সহ পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের বাড়ী ঘিরে ফেলে। তারা চিত্ত সাহাকে বেঁধে জীপে করে সুধারাম থানায় নিয়ে আসে। এ সময়ে হরিনারায়নপুরের কালু মিয়া তাঁকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শান্তি কমিটির সার“ উকিলের কাছে অনেক অনূনয় বিনয় করেও কোন ফল হয়নি। সেদিন সারা রাত্রি ধরে তার উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। অত্যন্ত নৃশংশ লোম হর্ষক ঘটনাটি ঘটে তার পরদিন। পাকিস্তানী সেনাবাহীনির একটি জীপের পিছনে তাকে একটি লম্বা রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হলো। তারপর সেই জীপ মাইজদী-চৌমুহনীর প্রধান রাস্তা দিয়ে দ্র“ত চালিয়ে নেওয়া হলো। জীপ দ্র“ত চালানোর ফলে এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় তার শরীর ছেড়িয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো। খসে খসে পড়লো শরীরের মাংস গুলো। জীপে বাঁধার আগে চিত্ত সাহা বার বার বলেছিলো তাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে না মেরে গুলি করে মারার জন্য। কিন্তু ঘাতকেরা তার সেই কর“ন আর্জি টুকুও কর্ণপাত করে নি। যতক্ষন পর্যন্ত তার জীবনদীপ নিভে না গেছে ততক্ষন পর্যন্ত তারা এভাবে জীপ চালিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে। একসময় ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত নিথর দেহটি তারা রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। কেউ ভয়ে কাছে আসে নি। কুকুর শিয়ালের খাদ্য হিসাবে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। একটি জীবন্ত জ্যান্ত তাজা মানুষকে মধ্যযুগীয় কায়দায় কি ভিষন নৃশংশতাং এ ভাবে মারা হলো আজ তা ভাবতেও গা শিহরিয়ে উঠে। চিত্ত সাহাকে যখন ধরে নিয়ে আসে তাঁর কাছে তখন তার দোকান আর বাড়ীর চাবির গোছা ছিল। সেই চাবিটি তখনকার ডি.আই.বি ইন্সপেক্টর ওদুদ সাহেবকে নিয়ে বলেছিলেন এটি যেন তার পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া হয়। পরে তিনি সেই চাবি তার স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।

চিত্তরঞ্জন সাহার বড় ছেলে সঞ্জু সাহা। এখন রেডিও মেকানিক্্র। চৌমুহনী রেল গেইটের কাছে মিতা ইলেক্ট্রনিক্্র নামে একটি ছোট্ট দোকানের মালিক। গণিপুরে রেললাইনের ধারেই খালের পাড়ে অপ্রসস্ত ছোট্ট একটি বস্তির মত টিনের ঘরে দুটি ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে বাস করে। তার বর্তমান বয়স ৪০/৪২ হবে। চৌমুহনী কজে থেকে আই.এ পাশ করেছে। তার পিতার হত্যা কান্ডের পর তাদের দিনগুলো গিয়েছে এক দুর্বিসহ সকর“ন অবস্থায়। তাদের দোকান ঘরটি রফিক উল্ল্যাহ নামে একজন দখল করে নেয়। তখনকার পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মফিজ উল্ল্যাহ। তার সহযোগীতায় সেটি পরে ফিরে পান। সহায় সম্বল কপর্দকহীন অবস্থায় বিশ্বনাথ বাবুর কাছে ইলেকট্রনিক্্র এর কাজ শিখে আট দশ বছর আগে এ দোকান দেয়।

সঞ্জু সাহার চৌমুহনীর বাসায় বসে কথা হ”িছল। সেই দুঃসময়ের কথা বলতে বলতে বাকর“দ্ধ হয়ে পড়েন সঞ্জু সাহা। ছাব্বিশ সাতাশ বছর আগের সেই দুঃসহ ক্ষতের স্মৃতিতে ছোঁয়া লেগে কষ্টের অশ্র“ ধারা বয়ে গেলো দু’ চোখ জুড়ে। কথা বলছিল অসুস্থ্য শরীর নিয়ে। ক্রুন মলিন মুখে ফুটে উঠলো পিতার মৃত্যুর সেই যন্ত্রনাকাতর মখচ্ছবি। সেটি যে আরো কষ্টের আরো করুন।


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

প্রকাশিত মুক্তকন্ঠ

--Foez 07:51, 3 June 2013 (UTC)