মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্রেরই সৈনিক

From WikiEducator
Jump to: navigation, search

মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্রেরই সৈনিক

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি সাবেক এটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারের পর থেকেই তাঁর ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা ও মুক্তির জন্য জাতিয় ও আনর্জাতিক বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

আধিকারের ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১০ অগাষ্ট ২০১৩, রাত আনুমানিক ১০:২০ টায় যখন আদিলুর রহমান খান তাঁর পরিবারসহ বাসায় ফিরছিলেন, তখন সাদা পোশাকের প্রায় ১০ জন লোক একটি সাদা মাইক্রোবাস যার নম্বর ঢাকা মেট্রো- ৫৩৪২০৬ থেকে নেমে এসে তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাঁরা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলে পরিচয় দেয়। যখন তাঁরা আদিলুর রহমান খানকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে তখন আদিলুর রহমান খান তাঁদের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখতে চান কিন্তু তাঁরা তা দেখাতে ব্যর্থ হন। সাদা পোশাকের ওই লোকগুলো সে সময়ে তাঁকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। আদিলুর রহমান খানের পরিবার এবং অধিকার এর কর্মীরা তাৎক্ষনিক তাঁর সন্ধান পাবার জন্য গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে আদিলুর রহমান খানের পরিবার একটি সাধারণ ডায়রি করার জন্য গুলশান থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খানের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কথা জানান এবং সাধারণ ডায়রি করার ব্যাপারে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরদিন ১১ অগাষ্ট ২০১৩ মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। এর আগে আইনজীবী ও পরিবারের কেউই তাঁকে গ্রেফতারের কারণ কি তা জানতে পারেনি এমনকি তাঁর সাথে যোগাযোগও করতে পারেনি।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৫ ও ৬ মে হেফাজত ইসলামের ঢাকা অবরোধের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬১ জন নিহত হয়েছে মর্মে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য প্রকাশের অভিযোগে আদিলুর রহমানকে সিআরপিসি ১৮৯৮ এর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন ডিবি (দক্ষিণ) পুলিশের পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম।

রোববার রাতেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণাদি পাওয়ার আশায় আদিলুর রহমান খানের বাসভবন ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তিনটি ল্যাপটপ ও দুটি সিপিইউ জব্দ করেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে আরো বলা হয় ৫ ও ৬মে রাতে পুলিশের অভিযানে কোন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি বা কেউ মারা যায়নি, কিন্তু অধিকার ৬১ জন মারা গিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে মৃতের তালিকা চাওয়া হলেও অধিকার কোন তথ্য দেয়নি যার জন্য আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই বলে যে অধিকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ লঙ্ঘন করেছে। একইদিনে, আদালত আদিলুর রহমান খানের জামিন না মঞ্জুর করে এবং ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে গোয়েন্দা পুলিশের হাজতে পাঠায়। ১২ অগাষ্ট ২০১৩ আদিলুর রহমান খান ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি ক্রিমিনাল মিসেলিনিয়াস পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনে আদিলুর রহমান খান উল্লেখ করেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ অনা হয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং যা অশুভ উদ্দেশ্যে তাঁকে নির্যাতন ও অপদস্ত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে। পিটিশন থেকে জানা যায়, তথ্য মন্ত্রনালয়ের ১০ জুলাই ২০১৩ তারিখের চিঠির জবাবে ১৭ জুলাই ২০১৩ অধিকার পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছে যে, সরকার যদি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে তবেই অধিকার ৫ ও ৬ মে ২০১৩ ঘটনার নিহতের তালিকা প্রকাশ করবে কারণ তদন্ত কমিশন আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী সরকারকে কমিশন গঠনের ক্ষমতা দেয়া আছে। আদিলুর রহমান খানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বৈধতার বিষয়ে উচ্চআদালতে বলা হয়, ৫৪ ধারায় রিমান্ডে নেয়া রাষ্ট্র বনাম বাংলাদেশ মামলায় (৫৫ ডি এল আর ৩৬৩) উচ্চআদালতের রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।

আদিলুর রহমান খানের আইনজীবিদের শুনানীর পর উচ্চআদালত তাঁর রিমান্ড স্থগিতের আদেশ দিয়ে রুল জারি করে এবং বলে যদি প্রয়োজন হয় তবে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৩ অগাষ্ট ২০১৩ তাঁকে মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে হাজির করা হয় এবং সেখান থেকে প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং পরে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

অধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্ব হতেই আদিলুর রহমান খান মানবাধিকার রক্ষার কাজ করেছেন । আইনজীবী হিসেবে তিনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পক্ষে অনেক মানবাধিকারের মামলা লড়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি এবং অন্য তিনজন আইনজীবী ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দন্ডিত ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে ছিলেন সোচ্চার। ৩১ অক্টোবর ২০০১ এ তিনি ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যোগ দেন এবং ১০ মে ২০০৭ এ অব্যহতি নেন। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি মানব পাচার অভিযুক্তদের বিচার কার্যের পরিচালনার সমন্বয়ক হিসেবে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। একজন তরুন আইনজীবী, জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) এর সদস্য হিসেবে তিনি সক্রিয়ভাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। গ্রেফতারের পর থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বার বার বলা হচ্ছে, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ মহলের হয়ে কাজ করছেন।

যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশে যে কয়টি মানবাধিকার সংস্থা কাজ করছে তার মাঝে অধিকার কিছুটা ব্যাতিক্রমী কাজ করে থাকে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অধিকার মানবাধিকার বিষয়ে তার অঙ্গীকার নিশ্চিত করে আসছে। যে জন্য জাতিসংঘ সহ দেশে এবং বিদেশে অধিকার তার কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। অধিকার তার কার্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এর বিষয়ে কখনোই ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, রাজনৈতিক দল ইত্যাদির প্রতি কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করেনি। অধিকার বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন, গুম, সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘণ বন্ধের জন্য সচেষ্ট।

আমাদের সীমান্তে ভারতের বিএসএফের নির্বিচার গুলিবর্ষনে অহরহ যে বাংলাদেশীরা নিহত হচ্ছে অধিকার সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার থেকেছে। জাতিয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে মানবাধিকারের বিষয়গুলো আধিকার দৃঢ় ভাবে তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচিত ফেলানী হত্যার প্রতিকার চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার পিছনে অধিকার নিরলস ভাবে কাজ করেছে। তার ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার ফালানী হত্যার বিচার শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।

মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয় কাজ করা ছাড়াও আধিকার এ পর্যন্ত সারা দেশের পাঁচশ’ এর আধিক স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার কর্মীকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছে। তারা একএকজন মানবাধিকাররক্ষী বা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হিসাবে পরিচিত।

মানবাধিকাররক্ষীরা দেশের কোথাও আইন শৃংখলা বাহিনী কতৃক কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তা সরকারের সামনে তুলে ধরছে। দেশের কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাষ্ট্রকে অপরাধির কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার ছিলো একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার। তাই রাষ্ট্রের মানবিক শরীরে যদি কোথাও ক্ষত সৃষ্টি হয় তাহলে মানবাধিকার কর্মীদের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র পরিচালনাকারি সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। এ কাজ কোনো অবস্থাতেই সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করা নয়। রাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষা করে রাষ্ট্রকে সন্মানের উঁচু স্থানে তুলে ধরাই এদের পবিত্র কাজ।

দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। যতবড় নৃশংস খুনি অপরাধি হোক, মানুষ হিসাবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে, রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন খুনি দন্ডযোগ্য আসামীকে বিনা বিচারে খুন করা দন্ডযোগ্য আর একটি খুনেরই নামান্তর। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে যারা জড়িত আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অপরাধি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাভিনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস্’(International covenant on civil and Political Rights ) এর আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার আইনের দ্বারা সংরক্ষিত। অধিকিন্তু কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবেন না(সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা, ১৯৪৮-এর আর্টিকেল-৩)। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৯/৬৫ রেজুলেশন অনুসারে ‘বেআইনি ও অন্যায় হত্যা এবং আকষ্মিক হত্যার কার্যকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়’। এ বিষয়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার অর্টিকেল-৫ এ ব্যাক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমর্যাদাকর ব্যবহার বা নির্যাতন করা যাবেনা’। উক্ত চুক্তির ধারা-২ এর ৩-(ক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোনো চুক্তিতে বর্নিত অধিকার এবং স্বাধিনতা সমূহ লঙ্ঘিত হয়, তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লঙ্ঘন সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দারা সংগঠিত হয়’। তা সত্বেও বিচার বহির্ভুত হত্যার সংখা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের স্বাধিনতার পর থেকেই প্রত্যেক সরকারের আমলেই দেশে মানবাধিকার চরম ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। তখন কোনো মানবাধিকার কর্মী সোচ্চার হলে সে সরকার তাকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়। আধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানও এ থেকে রেহাই পাননি।

যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশে যে কয়টি মানবাধিকার সংস্থা কাজ করছে তার মাঝে অধিকার কিছুটা ব্যাতিক্রমী কাজ করে থাকে।

অধিকার বারবারই দাবি করে আসছে, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই মানবাধিকার বিষয়ে তার অঙ্গীকার নিশ্চিত করে আসছে। যে জন্য জাতিসংঘসহ দেশে এবং বিদেশে অধিকার তার কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। অধিকার তার কার্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এর বিষয়ে কখনোই ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, রাজনৈতিক দল ইত্যাদির প্রতি কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করেনি। অধিকার বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন, গুম, সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘণ বন্ধের জন্য সচেষ্ট।

এ সব কারণে ১৯ বছর ধরে অধিকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি সরকার অধিকার এর কর্মকান্ডের উপর বিশেষ নজর রাখছে। এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় কোনো মানবাধিকারকর্মীই কারো প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে কোনো কর্ম করেনা। একমাত্র রাষ্ট্রের সৈনিক হয়েই মানবাধিকার কর্মীরা নিরলস কাজ করে যায়। সকল মানবাধিকার কর্মীই আইনের শাসন, গনতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাকে নিশ্চিত সমুহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।

ইতিমধ্যে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ্যাডঃ আদিলুর রহ্‌মান খানের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর আসু মুক্তি দাবি করেছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এতে মানবাধিকারের কর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করা ও নিরাপত্তাবোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সরকারের কাছে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করা হয়।

বেসরকারি সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আদিলুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ।

আদিলুর রহমানের গ্রেপ্তার বাকস্বাধীনতা ও তথ্য অধিকারের ওপর সরকারের নিকৃষ্ট হামলা বলে নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফোরাম এশিয়া তাঁর শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, ন্যাপ ভাসানী ও নাগরিক উদ্যোগ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অধিকার সম্পাদকের গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পৃথক প্রতিক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশবরেণ্য একজন মানবাধিকার সংগঠককে সরকার বিনা ওয়ারেন্টে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে এসব না করেও সরকার আইনি পদক্ষেপ নিতে পারত।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আদিলুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে যে আদিলুর হেফাজতকর্মীদের হতাহতের ঘটনা নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তাহলে তাকে জেলে নিক্ষেপের পরিবর্তে জনসমক্ষে তার সঙ্গে বিতর্কে যেতে পারত।’

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী

E-mail: mhfoez@gmail.com

১৭ আগস্ট, ২০১৩

--Foez 09:20, 18 August 2013 (UTC)