মাওলানা ইয়াকুব নূরী

From WikiEducator
Jump to: navigation, search


নোয়াখালীর আধ্যাত্মিক পুরুষ

মাওলানা ইয়াকুব নূরী


'মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


মাওলানা ইয়াকুব নূরী ছিলেন নোয়াখালীর একজন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক পুরুষ। প্রায় দুই শ’ বছর পূর্বে তাঁর পিতা মাওলানা কমর উদ্দিন সুদূর ইয়েমেন থেকে ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যে এ দেশে আসেন। সেই সময় পুরাতন নোয়াখালী শহরের সঙ্গে ছিলো সরাসরি সমুদ্রের যোগাযোগ। বিশ্বের নানান দেশের জাহাজ ভিড়তো সে সময়ের সমুদ্র বন্দর ‘শান্তাসিতা’ ঘাটে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সুদূর আরব দেশ থেকে অনেক সাধক পুরুষ বহু পূর্ব থেকেই ব্যাবসা বানিজ্যের উদ্দেশ্যে এ দেশে আগমন করেন। তাঁরা শুধু ব্যাবসা বনিজ্যই করতেন না।, ইসলাম ধর্ম প্রচারও তাঁদের বড় উদ্দেশ্য ছিলো। কমরউদ্দিন তৎকালীন নোয়াখালীর এক সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের টুকু মুন্সির এক পর্দানশীন বিদুষী বোনকে বিয়ে করেন। মাওলানা কমরউদ্দিনও ছিলেন একজন বুজুর্গান ব্যাক্তি। কথিত আছে তাঁর ঔরসে তাঁর স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসার পর কমরউদ্দিন তাঁর স্ত্রীকে বল্লেন ‘তোমার গর্ভে যে সন্তান এসেছে, সে পৃথিবীতে এসে ইসলামের আলো জ্বালাবে’। এইবলে তিনি পুত্র ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই তঁর স্ত্রীর হাতে ছেলের জন্য টুপি ও তছবিহ দিয়ে নিজের দেশে চলে যান এবং আর কখনো ফিরে আসেননি। ভূমিষ্ট হওয়ার পর ছেলের নাম রাখা হয ‘মোহাম্মদ ইয়াকুব’। বাল্যকাল থেকেই শিশু ইয়াকুবের ভিতর আধ্যাত্মিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে।


শৈশবে তিনি স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়াশুনা শেষ করেন। পরবর্তীতে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে তিনি টাইটেল পাশ করেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে পুরাতন শহরে এক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পর তাঁর মায়ের আদেশে তখনকার এক বুজুর্গান মাওলানা আহম্মদ উল্লাহ্‌ সাহেবের দরবারে দোয়া নিয়ে ‘বয়ত’ হন। ইতি মধ্যে তাঁর বিভিন্ন আধ্যাত্মিকতা ও ঐশ্বরিক ক্ষমতা লোকচক্ষুর সম্মুখে প্রকাশিত হতে থাকে। দলে দলে হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান সম্প্রদায়ের নানান মানুষ তাঁর মুরিদ হতে থাকে।


একটি ঘটনা তখনকার দিনে মহা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। তাঁর বংশধরদের কাছ থেকে জানা যায়, তখন ছিলো বৃটিশ আমল। বিভিন্ন যায়গা থেকে তাঁর মুরিদরা মানি ওয়ার্ডার করে তাঁর জন্য টাকা পাঠাতেন। সেই সময তাঁর গ্রামে তাঁরই নামের আর একজন গ্রামবাসীর কাছে ষোল টাকা মানি ওয়ার্ডার আসে। পোষ্ট অফিসের পিয়ন ভুল বসত: সেই টাকা মাওলানা ইয়াকুব নূরীর কাছে দিয়ে যায়। তিনি পোষ্টম্যান থেকে সই করে টাকা নিয়ে নেন। বেশ কিছুদিন পর প্রকৃত মালিক মাওলানা ইয়াকুব নূরীর নামে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। সে সময় তিনি সর্বক্ষণ কাঠের খুঁটির খড়ম পরে থাকতেন। তাঁর নামে কোর্টে সমন হলে তিনি যথাবিহিত কাঠের খড়ম পায়ে কোর্টে উপস্থিত হন। তাঁর হাজার হাজার মুরিদ ও উৎসুক দর্শক সেই সময কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। কোর্টের কঠগড়ায় পাটাতনে তিনি খড়ম পায়ে উঠে দাঁড়ালেন। বিচারকের সামনে এভাবে আসা কোর্ট অবমাননার সামিল। হাকিম এজন্য তাঁর উপর মহা রুষ্ট হন। হাকিম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন কিন্তু অপরাধের কথা স্বীকার করলেন না। হাকিম জেরা করার এক পর্যায়ে পর পর তিন বার তাঁকে পাগল বলে সম্বোধন করেন। পরক্ষনেই সেই হাকিম নিজেই সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে গায়ের সমস্ত পরিধান খুলে মামলার নথিপত্র সব ছিঁড়ে উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় নেমে আসেন। এই ঘটনা তখন হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করে। এ খবর দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে এই সাধকের প্রতি সাধারন মানুষের আরো বিশ্বাস, ভক্তি ও শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। এ ঘটনার পর বৃটিশ সরকারের বড়লাট ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মচারীরা তাঁর কাছে ছুটে এসে মাপ চাইতে থাকে।


জীবিত অবস্থায় এই সাধক পুরুষ কোনোদিন এক বেলার অধিক কোনো খাদ্যবস্তু ঘরে রাখতেন না। দর্শনার্থী ও মুরিদরা যা দিতেন তার সবই তিনি গরিব দু:খীদের মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিতেন। তাঁর আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক ক্ষমতার জন্য তাঁকে সবাই ‘নূরী’ বা ‘ঐশ্বরিক আলো’ বলে সম্বোধন করতেন। এখনো আনেক মানুষের মুখে মুখে এই সাধক পুরুষের ঐশ্বরিক নানান ক্ষমতার কথা প্রচারিত হয়ে আসছে। নোযাখালীর সদরের সোনাপুরে তাঁর নামে ‘নূরীয়া মাদ্রাসা’ ও ‘নূরীয়া প্রাইমারি স্কুল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর দশ ফাল্গুন যথাবিহিত তাঁর ঔরশ মোবারক পালিত হয়। দেশ বিদেশের নানান ধর্মের মানুষ সে ঔরশে সামিল হন।


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রীল্যন্স সাংবাদিক
মাইজদি কোর্ট, নোয়াখালী
মুঠোফোন: ০১৭১১২২৩৩৯৯


e-mail: mhfoez@gmail.com



--Foez 13:57, 19 January 2010 (UTC)