তুলসী

From WikiEducator
Jump to: navigation, search

'তুলসী'


Tulshi-1.jpg

তুলসী


মাহমুদুল হক ফয়েজ


উদ্ভিদের নাম: তুলসী Tulsi

বৈজ্ঞানিক নাম বোটানিক্যল নামঃ  : Ocimum sanctum linn

ইংরেজি নাম  : Holy Basil/Common basil

পরিবার  : Labiatae

অন্যান্য প্রচলিত নাম: সুরসা, তুলসী (সংস্কৃত), তুলসী (বাংলা), তুলসী (তামিল), তুলসী (হিন্দি), উলসী বাদরুজ (আরবি)।

বর্ণনা

তুলসী বড় বীরুত বা ছোট গুল্ম জাতীয় সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। এটি ২-৪ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। কান্ড শক্ত, কখনও চার কোণাকার। পাতা সরল, ডিম্বাকৃতি, ছোট রোমযুক্ত, কিনার সাধারণত খাঁজ কাটা। বীজ চেপ্টা, মসৃন ও ফিকে লাল। শীতকালে ফুল ও ফল হয়।


Tulshi-9.jpg

সাধারণ গুন:

সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক।

ব্যবহার্য অংশ: পাতা ও শিকড়।

উত্তোলণের সময়: সারা বছর এ গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। শীত কালের শেষে গাছে ফুল আসে। বসন্তে ফল পেকে যায়। জুলাই আগষ্ট বা নভেম্বর ডিসেম্বর এতে মঞ্জরী দেখা দেয়। বসন্তের শেষে বৈশাখে বীজ সংগ্রহ করা যায়

আবাদী/অনাবাদী/বনজ: আবাদী অনাবাদী ও বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।

চাষাবাদের ধরণ: পানি জমেনা এমন উঁচু ভেজা মাটিতে কিছুটা ছায়া যুক্ত যায়গায় এ গাছ ভাল জন্মে। বীজতলা ভাল ভাবে চাষ করে শুকনো বীজ রোপন করতে হয়। কিছুদিনের ভিতর চারা গজিয়ে উঠে।

ব্যবহার: আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি তাজা তুলসী পাতার রসের সাথে একটু আদার রস ও মধুসহ খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস মধু, আদা ও পিঁয়াজের রসের সাথে এক সাথে পান (ছবি)করলে সর্দি বের হয়ে যায় এবং হাপানিতে আরাম হয়।


তুলসী পাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট কামড়ানো, কাশি ও লিভার দোষে উপকার পাওয়া যায়।

তুলসী পাতা ও দুর্বার ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানি ভাল হয়।

স্থানীয়ভাবে তুলসী পাতার রস দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।

পাতা ও শিকড়ের ক্বাথ ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য বেশ উপকারী। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে প্রতিদিন সকালে গোল মরিচের সাথে তুলসী পাতার রস খেতে দেয়া হয়। যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়।

বসন্ত, হাম প্রভৃতির পিড়কা বা পুঁজ ঠিকমত বের না হলে তুলসী পাতার রস খেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে।

তুলসী পাতার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ক্রিমি রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়। শুষ্ক তুলসী পাতার ক্বাথ সর্দি, স্বরভঙ্গ, বক্ষপ্রদাহ, উদারাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে থাকে।

অজীর্ণজনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতার বেশ উপকার সাধন করে থাকে। এটি হজমকারক। প্রতিদিন সকালে ১৮০ গ্রাম পরিমান তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ সেরে যায়। বাত ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পট্টি দিলে ব্যথা সেরে যায়।

বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ কামড়ালে ঐ স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণা কম হয়।

যারা সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয় (বিশেষ করে শিশুদের) তারা কিছুদিন ৫ ফোঁটা মধুর সাথে ১০ ফোঁটা রস খেলে সর্দি প্রবণতা দূর হয়।

তুলসী মূল শুক্র গাঢ়কারক এবং বাজীকারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানেরসাথে খেলে ধ্বজভংগ বা যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।

কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়।

তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীঘদিন নী্রোগ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।

তুলসিপাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।

তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাব জনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।

মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কাল দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পা্তার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রঙ ফিরে আসে।

সূত্রঃ


চিরঞ্জীব বনৌষধী

আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য


মাহমুদুল হক ফয়েজ

মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯

e-mail:- mhfoez@gmail.com