অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাও সম্ভব!-2

From WikiEducator
Jump to: navigation, search



'অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাও সম্ভব!-২

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাও সম্ভব!-২

মাহমুদুল হক ফয়েজ


বাংলাদেশ থেকে প্রায় আট নয়’শ প্রতিনিধি সে আসরে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প থেকে নানান বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রাসায়নিক কৃষির ফলে খাদ্যে যে বিষাক্ততার সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের জীবন আজ নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণ বৈচিত্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া, ভূমি সমস্যা, পানি ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এর চাপিয়ে দেয়া শর্ত, নারী নির্যাতন, আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনসহ অনেক বিষয়ই আলোচিত হয়েছে বিশ্ব ফোরামে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলিতভাবে র‌্যালির আয়োজন করেছে। প্রায় সাত আটশ বাংলাদেশী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেছিলো। দণি এশিয়ার খাদ্য, কৃষি ও সাংস্কৃতিক ফোরাম (সানফেক) এর একটি র‌্যালি হয়েছিলো। সে র‌্যালিতে দেখানো হলো খাদ্যে রং ও নানা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত খাদ্য তৈরি হয়েছে। তার ফলে মানুষের শরীরে বিষাক্ততার সৃষ্টি হচ্ছে যার ভয়াবহতা কৃষিতে বিষ ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাণবৈচিত্র ও প্রাণ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নখর আগ্রাসন, কোকাকোলাসহ বহুজাতিক কোম্পানীর একচেটিয়া ব্যবসার নীল নকসাসহ নানা বিষয়ছিলো সে র‌্যালিতে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া প্রচন্ড আগ্রহ সহকারে জানতে চেয়েছে সানফেকের কার্যক্রম। উবিনীগ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার ষ্টলে ছিলো দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতি রাজনীতি বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছে। অনেক বিদেশী নারী ডেলিগেট বাংলাদেশের নারীদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কথা জানতে চেয়েছেন। অনেকের ধারনা ছিল যেহেতু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী সুতরাং নারীদের অবস্থা নিশ্চই ভাল হবে।

এ ফোরামে সবচেয়ে লনীয় দিক ছিল ল ল মানুষের জন্য কোনো কোমল পানীর দোকান ছিলনা। এমন কি আশেপাশেও তা দেখা যায়নি। কোনো সিগারেটের ধোঁয়া ওড়েনি। মানুষ অবলীলায় বিশুদ্ধ পানি পান করেছে। গ্রামের চাষীদের উৎপাদিত ফলের রস খেয়েছে। কোমল পানীর জন্য কাউকে হা-পিত্যেস করতেও দেখা যায়নি। স্লোগান উঠেছে নো-মোর কোকাকোলা।

বিশ্ব সামাজিক ফোরাম বা ওয়ার্ল্ড সোসাল ফোরামের প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর এক সময়ের সহকর্মী সহযোদ্ধা ৯০ বছর বয়সী ক্যাপটেন লক্সমী সেগাল। লালপাড় সাদা সাড়ী আর পাকা ছোট চুলে লক্সমী সেগালকে কোনো অবস্থাতেই মনে হয়নি তাঁর এত বয়স হয়েছে। মনের তরতাজা শান্তি আর প্রাণচঞ্চলতায় তিনি ছিলেন জ্যোতিষ্কমান তারকার মত। নেসকোগ্রাউন্ডের লাখ মানুষের সামনে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলে গেলেন, ফাইট ইজ নট ওভার। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। মানুষই সকল শক্তির আধার। সদিচ্ছা সহমর্মিতা আর ঐকান্তিকতা থাকলে সবার জন্য একটি বিশ্ব অবশ্যই সম্ভব।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন, প্যালেষ্টাইনের মুস্তফা বারঘোউটি, ব্রাজিলের চিকো হোয়াইটেকর, ইরানের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী শিরিন এবাদী, ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় প্রমুখ। ২১ জানুয়ারি অপরাহ্নে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে ল মানুষের একতানের মধ্যে শেষ হলো ৪র্থ বিশ্ব সামাজিক ফোরামের মহামিলন। ফোরামের কর্মকর্তারা জানান এটা কোনো সংগঠন নয়, কোনো প্রতিষ্ঠানও নয়। এটা বিভিন্ন মতের, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মিলন মেলা। এই মিলিত হওয়ার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পথ তৈরি হবে একটি অন্যরকম পৃথিবী গড়ে তোলার।

কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কিত রয়েছে যথেষ্ট। বামপন্থী গ্র“পগুলো এ আয়োজনকে প্রত্যাখান করেছে। তাদের ভাষায় বিপ্লব হলো জনগণের উৎসব। স্বতঃস্ফুর্ত জনগণের অংশগ্রহণে যে বিপ্লব সংগঠিত হয় সেটাই খাঁটি, টেকসই। অন্যগুলো ঠুনকো। সে অর্থে এ আয়োজন সবই বোগাস, অর্থহীন। পাশাপাশি তারা আয়োজন করেছে আরেকটি ফোরামের। মুম্বাইরেজিষ্ট্যান্স তারা প্রশ্ন তুলেছেন এত আয়োজনের এত পয়সা কোত্থেকে এলো। এনজিওরা এ আয়োজনের ষাট ভাগ পয়সা যুগিয়েছে। এনজিওর পয়সায় বিপ্লব হয়না। হবেও না। সোসাল ফোরামের নামে বিশ্বের স্বপ্নময় মানুষগুলো আবার ডোনারদের খপ্পরে পড়েছে। ডোনাররা কোনো কারণ ছাড়া সাড়ে আট কোটি রুপী দেয়নি। অনেকে মনে করেছেন জনগণের স্বতঃস্ফুর্ততাকে থামিয়ে দেয়ার জন্যই এনজিওদের এই প্রয়াস। তবে তাই বলে যে এটা একেবারে গুরুত্বহীন তা অনেকেই মেনে নেননি। এর ভিতর অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে। পৃথিবী জুড়ে ওই সময় নানান প্রশ্ন উঁকি দিয়ে উঠছে। সোচ্চার হচ্ছে মানুষ। বড় শিল্প শোষণের রুপ। সে শিল্প নয়। ছোট ছোট শিল্প গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদন ও বিপনন ভিত্তিক পৃথিবীতে শোষণ মাথা ছাড়া দেয়। শ্রমের যথাযথ মূল্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রেড গড়ে তুলতে হবে। এ সব আধুনিকতার ভেতর ও বাইরের নানান মতের নানান মানুষ এসেছিলেন ফোরামে। ল্য করা গেছে অধিকাংশ মানুষই এসেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে। এই ফোরাম হয়তো তাদেরকেই বেশি প্রভাবিত করেছে। তবে একেবারে তৃণমূল মানুষ যে আসেনি তা নয়। অনেকেই এসেছে মধ্যবিত্তের হাত ধরে। তারা কোনো না কোনো এনজিওর মাধ্যমে এখানে এসেছেন। বিশ্বায়ন অনেকই নানা ভাবে প্রভাবিত করছে। আর্থিকভাবে অনেকেই তিগ্রস্থ হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে দেশে দেশে। স্বেচ্ছা অবসর নতুন সংকট তৈরি করছে। মিল কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বাড়ছে। এর ভেতর আবার একটি ুদ্র সুবিধাবাদী শ্রেণী তৈরি হচ্ছে। হালুয়া রুটি পেয়ে তারা সন্তুষ্টির ঢেকুরও তুলছেন। সৃষ্টিহচ্ছে আত্মসম্মান বিবর্জিত এলিট শ্রেণী। নেসকো গ্রাউন্ডে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাইরেও এসেছেন অনেক ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে। অনেকেই একাত্ম হতে চেয়েছেন। নিজেদের মত গেয়েছেন নেচেছেন। এদের অনেকেই অসংগঠিত শ্রমিক, মজুর, আদিবাসী, অচ্ছুত সমাজের মানুষ। অনেকেই সন্দেহ করেন এত মত নিয়ে এক ঐক্যতান কি সম্ভব। হয়তো সম্ভব, হয়তো সম্ভব নয়। সম্ভব এই কারণে যে, ুদ্র ুদ্র মানুষের ুদ্র ুদ্র মতকে স্বীকৃতি প্রদান, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা হাজার মতকে এক জায়গায় আনা সম্ভব। সম্ভব নয় এই কারণে যে, বিপরীত ধর্মী মতকে এক জায়গায় টেনে আনা দূরূহ। ইলাষ্টিক দিয়ে টেনে এনে বাঁধনে রাখাও দুঃসহ। তবে অনেকেই আশাবাদী এখনই তা নয়। সময় মত তা অবশ্যই হবে। সময় দিতে হবে। কারণ মানুষের প্রগতির ইতিহাসে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পথই পথকে চিনিয়ে নিয়ে যাবে।


নেসকো গ্রাউন্ডে এসেছিলেন নামকরা সব জ্ঞানী গুনী মানুষ। ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক তাদের পিছু পিছু ছুটছেন জোঁকের মত। কারণ তারা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর বাইরে যারা এসেছেন তারা কি সবাই গুরুত্বহীন। তাদের অংশগ্রহণ কি কোনো ছাপই ফেলবে না। অবশ্যই ফেলবে। অনেকের মতে এরাই গুরুত্বপূর্ণ। কেন এসেছে তারা? কি পেয়েছে? কি অর্জন করে নিয়ে গেলো? তাদের অজর্ন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। অবলীলায় তারাও তাদের মতকে তুলে ধরতে চেয়েছে। আবার অনেকে এসেছে শুধু বুঝতে, দেখতে। মজার ব্যাপার হলো অনেক তৃণমূল মানুষ ছিলো নেসকো গ্রাউন্ডে। তারা নিজেরাই জানেনা কেন এত টাকার এত বিশাল আয়োজন।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছিলেন ন্যাম ব্যুভ জুন।ছয়দিন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে করে বলে যাচ্ছিলেন কোরিয়ার অভিবাসিত মানুষের কথা। বাংলাদেশ, চায়না, ভারত, বার্মা থেকে ৩শ ৮০ জন মানুষের জন্য ভিসা পাওয়ার অধিকার চান তিনি।

তিনি জানান, অনেক কিছু পাওয়ার আশা করেন তিনি এই ফোরাম থেকে। বিশ্ব সভার কাছে তারা এই তিন শ আশি জন মানুষের ভিসা অধিকার পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা চান। ছয়টি দিন একটি মুহুর্তের জন্যও তাকে থেমে থাকতে দেখা যায়নি। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে যাচ্ছিলেন তার কথা। একটি প্রতিবাদী মিছিলের বড় ছবিও ছিলো তার হাতে। সেখানে একটি মানুষের দিকে আঙ্গুল রেখে বলছিলো ‘হি ইজ বাংলাদেশী’। কোরিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুন কেসিটিইউ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় কর্মী।

এসমি চুনারা। বয়স প্রায় ত্রিশ। এসেছেন ইংল্যান্ড থেকে। সোস্যালিষ্ট ওয়ার্কার্স পার্টির সক্রিয় সদস্য। ত্রিশ জনের একটি দলের সঙ্গে এ ফোরামে যোগ দিয়েছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের একটি জয় হবেই। মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কোনো দিন বিফলে যায় না। বুশ-ব্লেয়ারের প্রতি তার দারুন ঘৃনা। দৃঢ় ভাবে বলে গেলেন, ‘উই ওয়ান্ট এ নিউ ওয়ার্ল্ড ফর আওয়ার সেলফ’ আমরা আমাদের জন্য একটি নতুন পৃথিবী চাই। জাপান বংশভূত নবুঁ এসেছে ইংল্যান্ড থেকে। লন্ডনের একটি কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র। তার ােভ, ঘৃণা জাপান সরকার এবং বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ জাপান বৃটিশকে অর্থ সাহায্য করছে ইরাক আগ্রাসনের জন্য। তার তীব্র প্রতিবাদ ইরাকে জাপানী ট্রুপ পাঠানোর বিরুদ্ধে। সে একজন সোসাল ওয়ার্কার। তার দলে রয়েছে আরো ত্রিশ জন সদস্য। কলকাতা থেকে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি থেকে একশ পঞ্চাশ জন যৌন কর্মী এসেছিলো এই মিলন মেলায়। ২৭ বছরের নিতাইগিরি সেজে গুজে হাটছিলো ভিড়ের মধ্যে। তার দিকে কারো নজর নেই। ‘দিদি, তুমি কি চাও এ ফোরাম থেকে’। প্রশ্ন শুনেই সাফ সাফ জবাব সমাজের সব মানুষ যেমন চায় তেমন, আমরাও মানুষ। মানুষ হিসেবে থাকার অধিকার। গিরি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। বলল তোমরা শুধু বল আমাদেরও কষ্ট যন্ত্রণা আছে। আনন্দ উল্লাস আছে। নিতাই গিরি বার বছর ধরে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে। কিভাবে এলে এ পেশায়? এত অল্প সময়ে কি সব বলা যায়। শুধু জেনে রাখ আমরা মানুষ’। চিলি থেকে এসেছিলেন হেক্টর রেমিরেজ। ইংরেজি একদম বলতে পারে না। হিন্দি তো নয়ই। ইশারা ইঙ্গিতে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। পরিবেশ ও ফেয়ার ট্রেড নিয়ে তাদের একটি সংগঠন আছে। সে সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। সংগঠনের নাম কালেক্ট্রিভো অটোপিয়াস। তারা তিন জন এই ফোরামে যোগ দিয়েছে। মূলত: দেখা এবং মত বিনিময় করতেই তার এখানে আসা।

মধ্য প্রদেশের লক্ষ্মীনারায়ণ মোহন একজন কম্পিউটার শিক। হুইল চেয়ার ছাড়া তার চলা অসম্ভব। ববওয়ালী জেলায় বিকলাঙ্গ সর্বদয়া সমিতি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক। বিকল্াঙ্গদের জন্য তাদের দাবী একটি ট্রাই সাইকেল প্রদান করা হোক। মোহন জানাল, বিকলাঙ্গ হিসেবে কারো ছবি তুলতে হলে সরকারি নিয়ম আছে। পা বিকলাঙ্গ হলে পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলতে হয়। শরীরের যে অঙ্গ বিকলাঙ্গ সে অঙ্গটি স্পষ্ট করে দেখতে হবে। তাদের জন্য এটি খুব মানহানিকর। মহিলাদের জন্য আরো বিড়ম্বনাপূর্ণ। কারণ ছবি তোলার জন্য মহিলাদেরও হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলতে হয়। তাদের সামাজিকতায় একটি খুবই অপমানকর। কিন্তু সরকারি আইনে তা করতেই হয়। মোহন এর প্রতিবাদ করছে। তার বিশ্বাস বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিবাদ হলে তাদের দাবী পূরণ হবেই।

কেরালা থেকে এসেছিল হিজরা সম্প্রদায়ের একজন হিজরা। তাদের চলা ফেরায় অদ্ভুত আচরণ। তারা না পুরুষ না নারী। তাদের দাবী তাদেরকে নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের পোষ্টারে লেখা ‘হিজরাজ আর ওমেন’।নেপাল থেকে এসেছেন পদ্মশিং বিশ্বকর্মা। কাঠমন্ডুর ডেলিথ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। তাঁদের সংগঠনের নাম ডেলিথ কমিশন। সমাজের কিছু মানুষকে অচ্ছুৎ করে রাখা হয়েছে। তারা পাঁচটি সমস্যায় জর্জরিত। আর্থিকভাবে তারা শোষিত, তাদের প্রতি হয় সামাজিক উৎপীড়ন, রাজনৈতিকভাবে তারা অচ্ছুত হয়ে আছে, শিা থেকে তারা বঞ্চিত, সাংস্কৃতিকভাবে তাদেরকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। বিশ্ব জনমতকে জানানোর জন্যই তারা এখানে এসেছে। অন্যদের সঙ্গে তারা সলিডারিটি করতে চায়। নেপাল ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলী অব পার্লামেন্টের সদস্য রামপ্রিত পাসওয়াল তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। গুজরাটের মুগুট রাম একজন নাট্য শিল্পী। তাদের সমাজে দরিদ্র লোকরা অস্পৃশ্য হয়ে আছে। পুরো রাজার পোষাক পরা মুগুটরাম চায় তাদের সমাজ থেকে অস্পৃশ্যতা দূর হোক। সর্বদয়া নামের একটি নাট্যাভিনয় তার নাটক জীবনের শ্রেষ্ঠ নাটক বলে জানায়। গুজরাটি ও হিন্দী ভাষা ভাল জানেন তিনি। ইংরেজি জানেন না? জানতে চাইলেই হাতের বুড়ো আঙ্গুলকে তর্জুনীতে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলেন ‘টুটি ফুটি ইংলিশ জানতা হ্যায়’। বাংলাদেশের মানুষ শুনেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। একটা ছোট নোটবুক থেকে পৃষ্ঠা টেনে ছিঁড়ে ঠিকানা লিখে দিয়ে বলেন, আমার ঠিকানায় একটি ছবি অবশ্যই পাঠিয়ে দেবে।

নেসকো গ্রাউন্ডের এক লাখ মানুষের আবর্জনা সাফ করার কাজে ছিল শ্রীমুত্তি সংগঠনের একশজন নারী কর্মী সুইপার। সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল তাদের ডিউটি। মুন্নুচাই, জোৎøা প্রতিদিন আবর্জনা সাফ করার কাজে নিয়োজিত ছিল। বয়স ত্রিশের কোঠায়। দুই শিফটে পঞ্চাশজন করে ওরা কাজ করেছিল। প্রতিদিন তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল একশ রুপী। কিন্তু মানুষের জন্য এই বিশাল আয়োজনে এদের প্রতি কি কারো খেয়াল ছিল। এত বিপুল আয়োজন এদেরকে খুব প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয়নি। বিশ বছরের গঙ্গুবাই একই ভাবে কাজের প্রতি ছিলো নিষ্ঠাবান। নেসকা গ্রাউন্ডের বিশাল মঞ্চে এরা এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জোৎøা আর গঙ্গুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা কি জান এখানে কি হচ্ছে? প্রথমে হেসে অবাক হয়ে তাকালো। ভাবখানা এই আদার ব্যাপারীর কাছে জাহাজের খবর জানতে চাইছো? ভাঙা হিন্দীতে ফের বললাম ‘এদার মে কেয়া হোতা, আপ লোককো কুই মালুম হোতা হ্যায়?। হতভম্ব হয়ে বলল ‘নেহী, ইয়ে কেয়া হোতা হ্যায়, হামলোক কুছ নেহি জানতা’। এত নাচ এত আনন্দ কোলাহল। সভা সেমিনার। ােভ বিােভ। ওদের কাছে সব কিছু অর্থহীন। পৃথিবীর সকল চিন্তাশীল মানুষের ভাবনা, অন্য পৃথিবী গড়া সম্ভব। এনাদার ওয়ার্ল্ড ইজ পসিবল। কিন্তু এই সব প্রান্তিক মানুষদের বাদ দিয়ে কি অন্য পৃথিবী গড়া সম্ভব? ইজ এনাদার ওয়াল্ড পসিবল?

মাহমুদুল হক ফয়েজ

--Foez 05:36, 19 January 2010 (UTC)